গাজায় থামছে না ইসরায়েলি আগ্রাসন, ছয় সপ্তাহে নিহত ২৩০০
দীর্ঘদিনের চাপা উত্তেজনা আর সংঘাতের ঘন মেঘ যেন গাজার আকাশ থেকে সরছেই না। গত ছয় সপ্তাহে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে চালানো হামলায় ফিলিস্তিনিদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এই ভূখণ্ড। আন্তর্জাতিক মহলে এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় মানবিক বিপর্যয় ক্রমেই গভীর হচ্ছে। গত ছয় সপ্তাহে চালানো আগ্রাসনে প্রাণ হারিয়েছেন দুই হাজারেরও ফিলিস্তিনি; যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুও রয়েছে। এই রক্তক্ষয়ী হামলায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গাজার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা, সৃষ্টি হয়েছে চরম আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা। খবর পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডনের।
সংঘাতের প্রেক্ষাপট
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বোমা বর্ষণ শুরু করে। দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চলা এই রক্তক্ষয়ী সংঘাত একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে আপাত শান্ত হলেও সেই শান্তি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। চলতি বছরের ১৮ মার্চ ইসরায়েল পুনরায় গাজায় বড় আকারের হামলা শুরু করে। ওই একদিনেই নিহত হয় চার শতাধিক মানুষ।
পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ
ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ মার্চের পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত দুই হাজার ৩০৮ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও পাঁচ হাজার ৯৭৩ জন। নিহতদের মধ্যে ৫৯৫ জন শিশু এবং ৩০৮ জন নারী। এই পরিসংখ্যান গাজার সাধারণ মানুষের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসনের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।
জিম্মি বিনিময় ও প্রাণহানি
সংঘাতের বিভিন্ন পর্যায়ে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে সাত দফায় ২৫ জন জিম্মি, কিছু মরদেহ এবং এক হাজার ৭০০ বন্দিকে বিনিময় করা হয়েছে। তবে এই স্বল্পকালীন বিরতি স্থায়ী হয়নি। চলমান সংঘাতের ফলে এ পর্যন্ত মোট ৫২ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। অপরাদিকে এক হাজার ১৬৩ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছেন। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় সমগ্র গাজা উপত্যকার মানুষ।
পুনর্গঠনের বিশাল চ্যালেঞ্জ
ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার পুনর্গঠনে বহু বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, স্কুলসহ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ধ্বংসস্তূপ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা গাজার মানুষের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।
অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
গাজার ভবিষ্যৎ শাসন ব্যবস্থা নিয়ে এখনও কোনো স্পষ্ট রূপরেখা তৈরি হয়নি। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে গাজা অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে আরব দেশগুলো একটি বিকল্প পরিকল্পনা পেশ করেছে, যা যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ সমর্থন করছে। এই পরিস্থিতিতে গাজার ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই। তবে চলমান সংঘাতের ভয়াবহতা এবং বিপুল সংখ্যক বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক