তিস্তা নিয়ে প্রকাশ্যে বলবেন না মোদি
বাংলাদেশের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি এবং স্থায়িত্ব নিয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আজ রোববার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে মোদি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আগামী ৬-৭ জুন ঢাকা সফরে নতুন এক অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলে সংসদের অনুমোদন নিয়েই বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিটি করতে যাচ্ছে ভারত। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বিতর্কটি শুরু হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের পরও বিতর্কটি বহাল থেকে যায়। আমরা এর অবসান ঘটানোর চেষ্টা করছি। এটা আদৌ সামান্য ঘটনা নয়।’urgentPhoto
শনিবার আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মোদি বলেন, ‘আয়তনে বাংলাদেশ ছোট হলেও আমাদের কাছে তার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক।’ হাসিনা সরকার বেশ কয়েক বছর ধরেই যে সন্ত্রাস দমনে অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা উল্লেখ করেন মোদি। তিনি মনে করেন, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করার কাজে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হতে পারে উন্নয়ন। দুদেশের যোগাযোগ বাড়লে পারস্পরিক আস্থাও বাড়বে।
শনিবারের মন্ত্রিসভায় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জাহাজ পরিবহনবিষয়ক একটি চুক্তির খসড়ায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে দুই দেশের মধ্যে পণ্য পরিবহনের পথ আরো সুগম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, এ মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী বাংলাদেশ।
ঢাকা সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সফরসঙ্গী হতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন মোদি। মমতা ৫ জুন রাতেই ঢাকা পৌঁছাবেন। ৬ জুন ফিরে যাবেন মমতা। মোদি যাবেন একদিন পরে, ৭ জুন।
কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার জানিয়েছে, মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তির বিষয়টি তোলা হবে। তবে প্রকাশ্যে তিস্তা নিয়ে মোদি কোনো কথা বলবেন না বলেই ঠিক হয়েছে। এমনকি কোনো যৌথ বিবৃতিতেও তিস্তার উল্লেখ থাকবে না। তবে পদ্মা (গঙ্গা) ও তিস্তা ছাড়া আরো যে ৫৪টি নদীর পানি বণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে, তার সবই খতিয়ে দেখার একটা আশ্বাস ভারতের পক্ষ থেকে দেওয়া হতে পারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলে তিস্তা পানি বণ্টন নিয়ে বলা হয়েছিল, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে যে পরিমাণ জল থাকবে, তা সমান ভাগে ভাগাভাগি হবে দুই দেশে। কিন্তু মমতা এ প্রস্তাবে রাজি হননি। তাঁর যুক্তি, শুষ্ক মৌসুমে তিস্তা নদীতে পানি থাকে না। আর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশ পানি পায় প্রকৃতির নিয়মে। তাই সমস্যা মূলত শুষ্ক মৌসুমেই। এদিকে, সিকিম তিস্তা নদীর ওপর প্রায় আটটি হাইড্রোলিক বাঁধ তৈরি করেছে। এ নিয়ে মমতার আপত্তি রয়েছে। সিকিমের সরকার জানিয়েছে, তারা পানিপ্রবাহ আটকে বাঁধ দেয়নি।
সূত্র জানায়, তিস্তা চুক্তি হলে নদী সংস্কার ও পানি সরবরাহের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে অনেক ঋণ-সহায়তা পাওয়া যাবে। এখন তিস্তা প্রকল্পে ভারতের যে ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে পানি যায়, ভবিষ্যতে তা নয় লাখ হেক্টর জমিতে সরবরাহ করা যেতে পারে। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের এ বিতর্ক এখনো মেটেনি। ফলে শেখ হাসিনার সরকারের কাছ থেকে মোদিকে আরো খানিকটা সময় নিতে হবে।
আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, নরেন্দ্র মোদির পক্ষে এই বার্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে যে, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে কংগ্রেসে সরকার যা পারেনি, তাঁর সরকার সেটা করতে পারছে। অর্থাৎ মমতাকে সঙ্গে নিয়ে মোদি সমাধানে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারে এটাও সাফল্য বলে দেখাতে পারবেন মোদি।

অনলাইন ডেস্ক