জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : যে কারণে আলোচনায় শিক্ষক নাসির উদ্দীন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি আদায়ে যখন রাজপথে নেমেছে তখন তাদের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে আলোচনায় উঠে এসেছেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমদ। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি কেবল একজন শিক্ষক নন, বরং বন্ধুরূপে, অভিভাবকরূপে সর্বদা সাহস জুগিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তিত্ব। ক্যাম্পাসের যেকোনো ন্যায্য আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন তাকে ‘শিক্ষার্থী প্রিয়’ উপাধিতে ভূষিত করেছে।
গতকাল বুধবার (১৪ মে) শিক্ষার্থীরা যখন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার অভিমুখে লংমার্চে অংশ নেয়, তখন পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে প্রথম সারিতে দেখা যায় নাসির উদ্দীন আহমদকে। শিক্ষার্থীদের অধিকারের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখতেও তিনি দ্বিধা করেননি। গুলিস্তান, হাইকোর্ট মোড়, মৎস্য ভবন—কোথাও পুলিশের ব্যারিকেড তাকে থামাতে পারেনি। কিন্তু কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং মোড়ে যখন কাঁদানে গ্যাস আর জলকামান এসে পড়ল, তখনও তিনি শিক্ষার্থীদের আগলে রাখার চেষ্টা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হন অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমদও।
এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘যিনি ছাত্রদের প্রতিটি আন্দোলনে সবার আগে বুক-পিঠ পেতে দিয়েছেন বুলেট, বেয়নেটের সামনে... সেই পিতৃতুল্য শিক্ষক আজও থামেননি।’
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) নাসির উদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীরা গতকাল থেকে তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। এর আগে ইউজিসিসহ (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) বিভিন্ন মাধ্যমে সরকারকে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো ইতিবাচক ফল পাওয়া যায়নি। আমি মনে করি, কোনো সরকারই শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। আর সেই কারণেই আজ আমাদের বাচ্চাদের (শিক্ষার্থী) জন্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হতে হচ্ছে।’
জবির এই সহযোগী অধ্যাপক আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাই আমাদের একমাত্র দায়িত্ব নয়, বরং তাদের মধ্যে মানসিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বোধ জাগ্রত করাও আমাদের কর্তব্য। আর সেই দায়িত্ববোধ থেকেই আমি সবসময় তাদের পাশে থাকি।’
নাসির উদ্দীন আহমদের এই ছাত্রবান্ধব ভূমিকা নতুন নয়। ২০১৪ সালে হল উদ্ধার আন্দোলনে তিনি ত্রিশের অধিক ছররা গুলিতে আহত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের হল আন্দোলনেও তিনি ছিলেন শিক্ষার্থীদের অন্যতম ভরসার জায়গা।
আওয়ামী লীগের শাসনামলে এজন্য চাকরিও হারাতে হয়েছে তাকে। তবুও শিক্ষার্থীদের প্রতি তার ভালোবাসা ও সমর্থন অটুট ছিল। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আওয়ামী সরকার পতনের পর চাকরি ফিরে পান তিনি।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক