চামড়াশিল্পে ধসের আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের
সারা দেশে চামড়াশিল্পে ধসের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। কোরবানির ঈদে ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন কাঁচা চামড়ার আড়তদাররা। আড়তদারদের দাবি, গত কয়েক বছরে কাঁচা চামড়ার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে।
এদিকে ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় এই শিল্পে মন্দা হাওয়া বইছে।
হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করে সাভারে আন্তর্জাতিকমানের আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলার চেষ্টা ছিল সরকারের। যার পথ ধরে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তর করে সাভারে নেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল, ট্যানারিগুলো হবে কমপ্লায়েন্ট, আন্তর্জাতিকভাবে বাড়বে দেশীয় চামড়ার বাজার। কিন্তু গত বছর থেকে উৎপাদনে যাওয়া এই ট্যানারিশিল্পের অবকাঠামোর অবস্থা বেহাল।
ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অ্যাপেক্স ট্যানারির নির্বাহী পরিচালক এম এ মাজেদ বলেন, ‘ডিমান্ড (চাহিদা) বাড়াইতে হইলে আমাদের কমপ্লায়েন্স রেডি করতে হবে। সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার) ঠিক করতে হবে। রাস্তাঘাট ঠিক করতে হবে। ডাম্পিং ইয়ার্ড ঠিক করতে হবে। এই জিনিসগুলো ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বিদেশিরা আসবে না। বিদেশিরা না এলে আপনার চামড়া দামও বাড়বে না এবং আমরা খুব বিপদগ্রস্ত হয়ে যাব।’
বিসিক চামড়া শিল্পনগরীর উপব্যবস্থাপক মোস্তফা মজুমদার বলেন, ‘এখানে কিছু সমস্যা ছিল রাস্তা নিয়ে। এখন রাস্তা হচ্ছে। আমাদের সিইটিপিটা এখন ওদের সঙ্গে কিছু যন্ত্রপাতির ব্যাপার আছে। আনতে হয়তো পদ্ধতিগত কিছু অসুবিধা আছে। সিইটিপি চলতেছে এবং ফুল ফ্লেজে (পুরোদমে) চলার জন্য আরেক এলসি আছে, এই এলসি হইলে আর কোনো সমস্যা এখান নাই।’
চামড়া শিল্পের বেহাল অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে সারা দেশের আড়তগুলোতে। আড়ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়াশিল্পের এমন মন্দা তাঁরা আগে দেখেননি। নাটোরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার বাজারেও ফেরেনি প্রাণচাঞ্চল্য।
এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘২৫-৩০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করি। এ রকম অসুবিধা কখনই দেখা দেয়নি যে চামড়া বিক্রি হয় না। চামড়াগুলা পড়ে আছে, দাম অর্ধেকে চলে আসছে।’ আরেকজন বলেন, ‘জায়গা জায়গা মাল লবণ দিয়ে রাইখ্যা দিছি, বুঝতে পারিছেন? কিন্তু মালের দাম কম।’
ভোলাতেও ভাটা পড়েছে কাঁচা চামড়ার চাহিদাতে। আড়তদাররা বলছেন, চামড়ার দাম কম হওয়ায় স্থানীয় মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন অনেকেই।
ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে অগ্রিম অর্থ না পেয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আড়তে চামড়া সংগ্রহের চাহিদা কমে যাওয়ায়ও চামড়ার বাজার পড়েছে বলে মনের করছেন অনেকে।
চামড়াশিল্পের এমন পরিস্থিতির মূল কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারের মন্দাকেই দায়ী করছেন ট্যানারি মালিকরা। তাঁরা বলছেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই তাঁরা চামড়া কিনছেন।
কুমিল্লা ট্যানারির পরিচালক মাহবুব হোসেন জানান, যথেষ্ট চামড়া কিনেছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। আরো কেনা যেত যদি সরকার থেকে ঋণ সুবিধা থাকত। এবার ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে অপ্রস্তুত ছিল, যার কারণে চামড়া বেশি চামড়া কিনতে পারেননি তাঁরা।
সাভারের ট্যানারিশিল্পের ১৫৫টি ট্যানারির মধ্যে চালু রয়েছে ১৩০টি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এরই মধ্যে চামড়া আসতে শুরু করেছে এই নগরীতে। দু-তিন দিনের মধ্যে ট্যানারির উৎপাদন পুরোদমে শুরু হবে বলে জানান ট্যানারি মালিকরা।

নিজস্ব প্রতিবেদক