খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন পরিবারের যে সদস্যরা
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় মারা যান। মা খালেদা জিয়া লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার হাসপাতালে ছুটে যান। সর্বশেষ গতকাল রাতেও মায়ের পাশে ছিলেন তারেক রহমান। গভীর রাতে হাসপাতাল থেকে বাসায় যান তিনি। আবার ভোর রাতে জরুরি ভিত্তিতে তারেক রহমান হাসপাতালে যান। ভোরে মায়ের মৃত্যুর সময় শয্যাপাশে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তারেক রহমান।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার অবস্থার গুরুতর অবনতি হলে মেডিকেল বোর্ড দ্রুত তারেক রহমানকে অবহিত করেন। তিনি গুলশান থেকে ভোরে দ্রুত হাসপাতালে যান। এর আগে তারেক রহমান মঙ্গলবার রাত ২টায় তিনি মাকে দেখে এভার কেয়ার হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান।
মঙ্গলবার সকালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন সদস্য এনটিভি অনলাইনকে এসব কথা জানান। অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে এই চিকিৎসক বলেন, ম্যাডামের আত্মার মাগফিরাতের জন্য আপনারা সবাই দোয়া রাখবেন। মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। ভোর ৬টার দিকে খালেদা জিয়া শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অবস্থার গুরুতর অবনতি হলে মেডিকেল বোর্ড দ্রুত পরিবারকে অবহিত করে। তারেক রহমান খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটে আসেন। মৃত্যুর আগে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করেন তারেক রহমান। প্রথমে তাকে একাই আইসিইউতে যেতে দেওয়া হয়েছে। এরপর পরিবারের সবাই ভেতরে যান।
চিকিৎসক জানান, এছাড়া খালেদা জিয়া মৃত্যুর সময় তার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দ শামিলা রহমান, তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর ছোট মেয়ে জাহিয়া রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে লন্ডনে থাকায় কোকোর বড় মেয়ে উপস্থিত থাকতে পারেননি।
এই চিকিৎসক আরও জানান, আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসনের মৃত্যু ঘোষণার পর সেনাবাহিনী পরবর্তী কার্যক্রম তদারকি করছে।
মেডিকেল বোর্ডের সদস্য আইসিইউ কনসালট্যান্ট ডা. জাফর ইকবাল মঙ্গলবার ভোরে জানান, বিএনপির চেয়ারপারসনের ডায়ালাইসিস বন্ধ হলেই শারীরিক অবস্থার বেশ অবনতি হয়। স্বাস্থ্যের অনেক জটিলতা থাকায় বয়সের কারণে একসঙ্গে সব চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছিল না।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে মেডিকেল বোর্ড সদস্য জিয়াউল হক জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই ক্রিটিক্যাল হওয়ায় বোর্ডের সব সদস্যকে দ্রুত তলব করা হয়। সবাই রাতেই হাসপাতালে চলে যান। ইনফেকশনের ভয়ে প্রথমে রাতে পরিবারের সদস্য কাউকে আইসিসির ভেতরে যেতে দেয়নি।
১৭ বছর পর গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন থেকে ফেরার পর মাকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তারেক রহমান। শনি, রোব ও সোমবার দিনভর নানা কর্মসূচি শেষে মাকে দেখতে যান তিনি। কয়েক ঘণ্টার মায়ের শয্যাপাশে অবস্থান করে মধ্য রাতে তিনি হাসপাতাল ছাড়েন।
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাব উদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছিল। তাঁর তত্ত্বাবধানে দেশ-বিদেশের প্রায় তিন ডজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেয়। গত ২৩ নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। যেগুলোর চিকিৎসা তিনি দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি নিজ বাসভবনে অবস্থানকালে তার শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা যায়। কিন্তু ক্রমান্বয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৩ নভেম্বর তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি-পরবর্তী পরীক্ষা নিরীক্ষায় তার ফসফস, হৃদযন্ত্র ও কিডনির অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গত ২৭ নভেম্বর তাকে নেওয়া হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দেশি-বিদেশি ৩০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক