যেভাবে তৈরি হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখের সুস্বাদু লালিগুড়
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে প্রাচীন পদ্ধতিতে মহিষ দিয়ে আখ মাড়াই করে ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু লালিগুড় (তরল গুড়) উৎপাদন করা হয়, যা শীতকালে পিঠা-পুলি ও মুড়ির সঙ্গে খাওয়া হয়। স্থানীয়ভাবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
বিজয়নগরের উৎপাদিত এই লালি গুড়ের কদর রয়েছে দেশব্যাপী। বিশেষ করে এখানকার বিষ্ণুপুর ও দুলালপুর গ্রামের উৎপাদন বেশি হয়, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমি ব্যবসা। এককালীন ফলন ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় আখ চাষে ঝুঁকছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে লতারিজবা সি ও মিচরিদানা জাতের আখ চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১০৫ মেট্রিকটন আখ উৎপাদন হারে ২১০০ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হয়েছে। যা থেকে ১৩২ মেট্রিক টন বা প্রায় ৮১ হাজার লিটার আখের রস পাওয়া যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিষ্ণুপুর ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে আখের চাষাবাদ হয়েছে। কোনো কোনো বাড়ির সামনে আখ মাড়াই কল বসানো আছে। কেউ কেউ আখ কেটে সেগুলোকে মাড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করছে। সেই আখ মাড়াই করে বের করা রস কড়াইয়ে জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মুখরোচক লালি গুড়।
কয়েকজন কৃষক বলেন, আমাদের বাপ-দাদার ঐতিহ্য এই পেশা। আমরাও ছোট থেকে করে আসছি। শুধু শীতকালেই এর চাহিদা থাকে। প্রতিবছর আমাদের প্রতিটি তলা থেকে ৮-১০ লাখ টাকা লাভ হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এসে এখান থেকে লালিগুড় নিয়ে যায়। আমাদের উৎপাদিত সব লালিগুড় এখানেই বিক্রি হয়ে যায়। বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে হয় না। এ বছর ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
লালিগুড় নিতে আসা কয়েকজন জানান, এখানে অর্জিনাল লালিগুড় পাওয়া যায়, যা অনেক সুস্বাদু। তাই প্রতিবছর এখান থেকে লালি নিতে আসি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জিয়াউল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় এবার ২০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। আখ চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকদের আখ চাষে আগ্রহ বেড়েই চলছে। প্রাচীন পদ্ধতিতে উৎপাদিত ভেজালমুক্ত লালিগুড়ের চাহিদাও অনেক। আখ চাষে তেমন কোনো ঝামেলা না থাকায় স্থানীয়রা আখ চাষ করছে। চাষের জন্য উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে আখ চাষিদের নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যাতে চাষিরা লাভবান হতে পারেন।’

শাহনেওয়াজ শাহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া (সদর-আশুগঞ্জ-বিজয়নগর)