উত্তরের জনপদে জেঁকে বসেছে শীত, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
উত্তরের জেলাগুলোতে জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে শিশু এবং বৃদ্ধসহ নতুন করে ৪৫৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে এই সময়ে মারা গেছেন ৬ জন।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. মেশকাতুল আবেদ জানান, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এই চিকিৎসক।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি রোগী সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালের ১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে মাত্র ৪০টি শয্যার বিপরীতে বর্তমানে ১৭৮ জন শিশু ভর্তি রয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, এক একটি শয্যায় চার থেকে পাঁচজন শিশুকে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। গত সাত দিনে এই হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডেই ভর্তি হয়েছে ৬১৩ জন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানান, বেড সংকটের কারণে এই ভোগান্তি হচ্ছে। রংপুরে নতুন একটি শিশু হাসপাতাল চালুর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা বাস্তবায়ন হলে এই চাপ কমবে।
চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে রোগীদের স্বজনদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতাল থেকে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে না। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে আসা এক শিশুর মা জানান, হাসপাতাল থেকে শুধু নাপা সিরাপ ছাড়া আর কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি জরুরি ইনজেকশন ও অ্যান্টিবায়োটিকও বাইরে থেকে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে, বিশেষ করে ‘মেরোপেনাম’ জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিকের তীব্র সংকট রয়েছে। সরবরাহ কম থাকায় শুধুমাত্র অতি প্রয়োজনীয় রোগীদের এই ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রংপুরে ১৩.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, তেঁতুলিয়ায় ১২.৫, সৈয়দপুরে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজারহাটে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, দিনাজপুরে ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ডিমলায় (নীলফামারী) ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, লালমনিরহাটে ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও গাইবান্ধায় ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আ ন ম তানভীর চৌধুরী (নোমান) জানান, বর্তমানে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। তিনি সুস্থ থাকতে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বা হাইজিন মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে খাওয়ার আগে ও পরে হাত পরিষ্কার রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং বিশুদ্ধ পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তীব্র শীতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছালেও এখনও অনেক এলাকায় সরকারি শীতবস্ত্র পৌঁছায়নি। এ বিষয়ে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলাম জানান, শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যেই বরাদ্দ পাওয়া গেলে তা বিতরণ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)