সেন্ট্রাল পিভটের যুগে বাংলাদেশ, বদলে যাচ্ছে সেচ ব্যবস্থা
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আধুনিক সেচ ব্যবস্থা ‘ভ্যালি ইরিগেশন সেন্ট্রাল পিভট’ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। অস্ট্রিয়ার আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়ন হতে যাওয়া এই অত্যাধুনিক সেচ প্রকল্পটি নাটোরের লালপুর উপজেলার নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ভবানীপুর কৃষি খামারে স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
বিএডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে বহুল ব্যবহৃত ‘সেন্ট্রাল পিভট ইরিগেশন’ প্রযুক্তি এবারই প্রথম বাংলাদেশে চালু হচ্ছে। এই প্রযুক্তিতে নিচ থেকে নয়, বরং পাইপের সঙ্গে যুক্ত স্প্রিংকলারের মাধ্যমে ওপর থেকে জমিতে পানি ছিটানো হবে। এতে কম সময় ও কম পানি ব্যবহার করে বড় আকারের কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া সম্ভব হবে, যা দেশের কৃষি উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ভবানীপুর কৃষি খামারে পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রকল্প চালু হলে ভবিষ্যতে অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি খামার ও কৃষি উদ্যোগেও এই প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়বে বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা। এর মাধ্যমে একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন, চাষের সময় কমানো এবং পানির উল্লেখযোগ্য সাশ্রয় সম্ভব হবে। ফলে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি আখসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।
বিএডিসির বড়াইগ্রাম জোনের সহকারী প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, আধুনিক কৃষিতে পানি ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেন্ট্রাল পিভট প্রযুক্তি সেচ ব্যবস্থাকে দ্রুত, স্বয়ংক্রিয় ও সাশ্রয়ী করবে। এই প্রকল্প সফল হলে দেশের বৃহৎ কৃষি খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও ক্রমবর্ধমান পানি সংকটের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের উদ্ভাবনী উদ্যোগ কৃষি উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের কাছে সহজলভ্য হলে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক কৃষির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে।
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের মহাব্যবস্থাপক (খামার) মো. বাকি বিল্লাহ বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো এই আধুনিক সেচ ব্যবস্থা আমাদের খামারে স্থাপিত হচ্ছে। এটি শুধু মিলের জন্য নয়, পুরো অঞ্চলের কৃষির জন্যও একটি বড় অর্জন। আমরা আশা করছি, সেন্ট্রাল পিভট প্রযুক্তির মাধ্যমে সময়, শ্রম ও পানি- এই তিনটি ক্ষেত্রেই সাশ্রয় হবে। আগে যেখানে সেচ দিতে দুই দিন সময় লাগত, সেখানে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এর ফলে একই জমিতে আখের সঙ্গে একাধিক সাথী ফসল উৎপাদনের সুযোগ তৈরি হবে।

সজিবুল হৃদয়, নাটোর (বাগাতিপাড়া-লালপুর)