শেখ হাসিনা ও তার দুই সন্তান ‘সুধা সদন’, শেখ রেহানা ও তার দুই সন্তান গুলশান-২ এ রাজউক থেকে প্লট প্রাপ্ত হওয়ার পরও তথ্য গোপন, অসম্পূর্ণ হলফনামা, আবেদনে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকার নতুন রাজধানী ‘পূর্বাচল নতুন শহরের’ মেগা প্রকল্পের কূটনৈতিক জোনে ছয়জনের নামে ৬০ কাঠা জমি বাগিয়ে নেন। শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যদের এসব সম্পত্তি পেতে প্রভাব খাটান শেখ রেহানার মেয়ে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক।

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকরে বড় বাধা ভারত?

এসব ঘটনায় দুদকের করা ছয়টি মামলার নথি পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) এ ঘটনায় তিনটি মামলায় রায় ও পরবর্তীতে শেখ রেহানা ও তার সন্তানদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার রায় ১ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হবে।

ছয়টি মামলার নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, অবিশ্বাস‍্য দ্রুততায় রাজধানীর নতুন শহর পূর্বাচলের ডিপ্লোমেটিক জোনে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন জুলাই অভ‍্যুত্থানে ক্ষমতাচ‍্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং বোন শেখ রেহানা সিদ্দিক, বোনের দুই সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও আজমিনা সিদ্দিকের নামেও বাগিয়ে নেন আরও ৫০ কাঠার প্লট। দীর্ঘ ১৫ শাসনামলে একাধিকবার ‘রিক্ত আমি, নিঃস্ব আমি, দেবার কিছু নাই….’ বললেও রাষ্ট্রের লক্ষ কোটি টাকা অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হাসিনা পরিবার পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লটের লোভও সামলাতে পারেননি। এই দুর্নীতিতে শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেন শেখ রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক।

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আলোচিত প্লট দুর্নীতির ছয়টি মামলার মধ‍্যে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার রায় ঘোষণা করবেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনা-কামালের সম্পদ বাজেয়াপ্তের নির্দেশ

এ ছাড়া অপর তিনটি মামলার শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা সিদ্দিক, শেখ রেহানার তিন সন্তান রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, আজমিনা সিদ্দিক ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকের রায় আগামী ১ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হবে।

শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির সুধা সদনের তথ্য গোপন

১৯৭৩ সালে শেখ মুজিবুর রহমান প্রেসিডেন্ট থাকাবস্থায় শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়া তৎকালীন পূর্তমন্ত্রী সোহরাব হোসেন বরাবর একটি সরকারি প্লটের জন্য আবেদন করেন। ১৯৭৪ সালের প্রথমদিকে ধানমণ্ডিতে ১৪ কাঠার একটি প্লট ওয়াজেদ মিয়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা বর্তমানে সুধা সদন নামে পরিচিত। তখন প্লটটির মূল‍্য ধরা হয়েছিল ৭০ হাজার টাকা। একাধিক কিস্তিতে ওই টাকা পরিশোধ করে প্লটটির মালিক হোন ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া। ১৯৮২ সালেই ধানমণ্ডিতে সুধা সদনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ড. ওয়াজেদ মিয়া সপরিবারে ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি মাসে ওই বাড়িতে ওঠেন। ২০০৯ সালের ৯ মে ওয়াজেদ মিয়া মারা যাওয়ার পর ওয়ারিশসূত্রে সুধা সদনের মালিক হন স্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। পরে শেখ হাসিনা সুধা সদনের তার নিজের অংশ দুই সন্তানকে হেবা দলিল করে দেন।

আরও পড়ুন : যে কারণে শেখ হাসিনা আপিল করতে পারবেন না

দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু সুধা দসন সরকারি সম্পত্তি এবং রাজউক থেকে বরাদ্দপ্রাপ্ত, তাই এসব ব্যক্তি পুনরায় সরকারি প্লটের আবেদনের যোগ্য নন। শেখ হাসিনা পূর্বাচলে প্লটের জন‍্য দাখিল করা হলফনামায় সুধা সদনের এসব তথ্য সম্পূর্ণ গোপন করেন। একইভাবে তার দুই সন্তানও এসব তথ্য গোপন করেন।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর খান মো. মঈনুল হাসান লিপন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, শেখ হাসিনার ছেলে জয় ও মেয়ে পুতুল হলফনামা দিয়ে জানিয়েছেন, রাজউকের এরিয়া নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার কোথাও তাদের নামে এবং আত্মীয়-স্বজনের নামে কোনো বাড়ি বা সম্পত্তি নেই। তিনি আরও বলেন, রাজধানীতে যদি আবেদনকারী, তাদের আত্মীয়-স্বজন বা রক্তের সম্পর্কের কারও বাড়ি থাকে, তাহলে তিনি প্লট পাবেন না। এরপরও হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা (শেখ হাসিনা-জয়-পুতুল) পূর্বাচলের প্লট নেন।

প্লট বরাদ্দের পর আবেদন শেখ হাসিনার

রাজউকের নিয়মানুযায়ী, কোনো ব্যক্তি প্লটের বরাদ্দ পেতে চাইলে তাকে রাজউকের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে আবেদন করতে হয়। সে ফরমে সুপারিশের প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে আইনজীবীর মাধ্যমে নোটারি হলফনামা বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ‍্যমে হলফনামা দাখিল করতে হয়। হলফনামায় উল্লেখ করতে হয়, ‘ইতোপূর্বে তিনি বা তার পরিবারের কেউ সরকারি কোনো সম্পত্তি বরাদ্দ পাননি বা মালিক হননি।’

আরও পড়ুন : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার রায়

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, দ্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (অ্যালটমেন্ট অব ল্যান্ডস) রুলস ১৯৬৯-এর ৯ বিধি সাপেক্ষে, ট্রাস্ট এমন ব্যক্তিকে প্লট বরাদ্দ করতে পারে, যারা সরকারি চাকুরি, জনসেবা কিংবা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। তবে এই বিধি অনুযায়ী কেউ নির্ধারিত ফরমে আবেদন না করলে এবং সরকার সুপারিশ না করলে তিনি বা তারা প্লট বরাদ্দ পাবেন না।

মামলার নথি ও রাজউক সূত্রে জানা যায়, শেখ হাসিনা প্লট বরাদ্দ চেয়ে রাজউকের কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন জমা দেননি। বরং ২০২২ সালের ১৯ জুলাই গণপূর্ত মন্ত্রণালয় শেখ হাসিনার নামে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়। এরপর ২৬ জুলাই বোর্ডসভায় প্লট বরাদ্দের সিদ্বান্ত অনুমোদন দিয়ে রাজউককে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে চিঠি দেয় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পরদিন ২৭ জুলাই শেখ হাসিনাকে প্লট বরাদ্দের উদ‍্যোগ নেয় রাজউক।

এ পর্যায়ে শেখ হাসিনা প্লট বরাদ্দের আবেদন করেন ও ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে হলফনামা দাখিল করেন। চারদিন পর ৩১ জুলাই তার নামে প্রাথমিকভাবে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।

শেখা হাসিনার সেই হলফনামায় দেখা যায়, প্রথম দুই পাতায় তার স্বাক্ষর রয়েছে। শেষের পাতায় আবেদনকারীর স্বাক্ষরের নির্ধারিত স্থানে তিনি স্বাক্ষর করেননি। আবার হলফনামাটি নোটারি পাবলিক করা হয়নি, স্ট্যাম্পে আইনজীবীর স্বাক্ষর ও সীলমোহর নেই। সেখানে সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া সুধা সদনের বাড়ির তথ‍্যও গোপন করা হয়। এসব ত্রুটি আমলে না নিয়ে ৩ আগস্ট দ্রুতগতিতে শেখ হাসিনার নামে পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি (২৭নং সেক্টরের ২৩নং রোডের প্লট নং ৯) চূড়ান্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরের মাসের ১২ সেপ্টেম্বর কালীগঞ্জ রেজিস্ট্রি অফিসের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নামে জমিটি রেজিস্ট্রি করা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর তার কাছে দলিল হস্তান্তর করা হয়।

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার রায় ঘিরে ভারতের প্রতিক্রিয়া

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আটজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকেরর সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া। গত ৩১ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। পরে এই মামলায় মোট ২৯ জন আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। গত ২৩ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার রায়ের জন্য দিন ধার্য করা হয়।

‘মায়ের কাছে’ পুতুলের প্লটের আবদার, ৩ দিনেই পূর্বাচলে বরাদ্দ

মামলার নথি থেকে দেখা যায়, মা ক্ষমতাচ‍্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি প্লটের আবদার করেছিলেন আদরের মেয়ে সাময়া ওয়াজেদ পুতুল। আর তাতেই অবিশ্বাস‍্য দ্রুততায় মাত্র তিনদিনে পেয়ে যান পূর্বাচলের কূটনৈতিক এলাকায় ১০ কাঠার একটি প্লট। রাজউক প্লটটি বরাদ্দ দিলেও পুতুল রাজউকের কাছে নিয়ম মেনে কোনো আবেদনই করেননি। প্লটের বরাদ্দ হওয়ার পর দাখিল করেন হলফনামা, আর সেখানে রাজধানীতে থাকা নিজেদের সব সম্পত্তির তথ‍্য গোপন করেন। এভাবেই পূর্বাচলের কূটনৈতিক এলাকায় মা শেখ হাসিনার মতো কন‍্যা পুতুলও পেয়ে যান ১০ কাঠার আরেকটি প্লট।

এর আগে গত ১২ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ পুতুল, শেখ হাসিনাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারি পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

আরও পড়ুন : রায় পড়ার সময় শেখ হাসিনার সেই বক্তব্যে উত্তেজনা

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি সায়মা ওয়াজেদ রাজউকের প্রকল্পসমূহে প্লট বরাদ্দের জন্য রাজউকের কাছে নির্ধারিত ফরমে কোনো আবেদন করেননি। তার আবেদনটি কোনো প্রকার যাচাই-বাছাইও করা হয়নি। এ কারণে দ‍্য ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট (অ‍্যালটমেন্ট অব ল‍্যান্ডস) রুলস ১৯৬৯-এর বিধি-৪ এর পদ্ধতিগত বিধান লংঘন হয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিজের বা পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারভুক্ত এলাকার বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা রয়েছে। তবুও অসৎ উদ্দেশ্যে হলফনামায় এসব তথ্য গোপন করেন। পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লংঘন করে নিজের মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেন। শুধু তাই নয়, তিনি রাজউকে কোনো আবেদন করেননি, এমনকি মায়ের (শেখ হাসিনা) কাছেও কোনো আবেদন জমা দেননি। এরপরও তিনি পূর্বাচলের নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট (২৭নং সেক্টরের ২০৩নং রাস্তার ১৭নং প্লট) বরাদ্দ নেন এবং নিজের নামে রেজিষ্ট্রি করেন। তিনি সরকারি জমি আত্মসাত করে নিজের ভোগদখলে রেখেছেন। এর মাধ‍্যমে আসামি পুতুল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (অ‍্যালটমেন্ট অব ল‍্যান্ডস) রুলস ১৯৬৯-এর ১৩এ (১)সি বিধান লংঘন করেছেন।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সাময়া ওয়াজেদ পুতুলের প্লটের জন‍্য শেখ হাসিনার নির্দেশে তার কার্যালয়ের মাধ্যমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ অন্যান্য কর্মকর্তাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করেন। শুধু তাই নয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে রাজউক প্লট বরাদ্দ করে। এতে আসামিরা জেনেশুনে আইন ও বিধির লঙ্ঘন করেন। 

দুদক প্রসিকিউটর খান মো. মাইনুল হাসান (লিপন) বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৬১, ১৬৩, ১৬৪, ১৬৫(ক), ৪০৯, ৪২০, ১০৯ এবং দুদক আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। ৪০৯ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জরিমানা। আমরা আসামিদর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছি।

আবেদন না করেও প্লট পান জয়

কারও কাছে প্লটের আবেদন করেননি। ক্ষমতাশালী মা শেখ হাসিনার কাছেও বোন সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের মতো প্লটের আবদার করেননি। তবু ‘মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির…’ মতো সজীব ওয়াজেদ জয়ও পূর্বাচলের কূটনৈতিক এলাকায় পেয়েছেন ১০ কাঠার প্লট। এই প্লট বরাদ্দে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি, মানা হয়নি রাজউকের আইন। হলফনামায়ও মিথ‍্যা তথ‍্য দিয়ে প্লটটি নিজের নামে রেজিস্ট্রি করে দখলে নিয়েছেন।

চলতি বছরের ২৪ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদালতে প্লট দুর্নীতি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে এসব তথ‍্য উঠে এসেছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) আলোচিত প্লট দুর্নীতির ছয়টি মামলার মধ‍্যে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে তিনটি মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য‍্য করা হয়েছে। ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করবেন।

আরও পড়ুন : রায় ঘোষণার সময় তাসবিহ পড়ছিলেন সাবেক আইজিপি মামুন

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, ‌‌রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিভিন্ন স্কিমে প্লট বরাদ্দ কার্যক্রম বর্ণিত বিধিমালায় প্রতিপালন সাপেক্ষে পরিচালিত ও বাস্তবায়িত হয়। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প রাজউক পরিচালিত ও বাস্তবায়িত একটি প্রকল্প বিধায় এই প্রকল্পটির প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিধি-৩ এর বিধান মানতে হবে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, রাজউক থেকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের প্রসপেক্টাস প্রকাশিত হয় ২০০৮ সালে। ওই প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে আবাসিক প্লট প্রাপ্তির জন্য আগ্রহী বাংলাদেশি নাগরিকদের রাজউকের নির্ধারিত আবেদন ফরমে ২০০৮ সালের ১৮ ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ও নির্ধারিত ফরমে আবেদন করেননি। রাজউকের বিধান লংঘন করে শেখ হাসিনা নিজে এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় উভয়ে লাভবান হওয়ার হীন উদ্দেশ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সরকারের সংরক্ষিত কোটায় পূর্বাচলে ১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে নির্দেশনা দেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, রাজউকের বিধি-৬ পর্যালোচনায় দেখা যায়, যথাযথভাবে প্রাপ্ত সব আবেদন প্লটের আকার অনুসারে একটি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হয়। কিন্তু জয়কে বরাদ্দ করা প্লটটির তথ্য রাজউকের কোনো রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ হয়নি।

সজীব ওয়াজেদ জয় পূর্বাচলের প্লটটি নিজ নামে রেজিস্ট্রি করে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

শেখ রেহানার গুলশান-২ এর বাড়ির তথ্য গোপন

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, শেখ রেহানা সিদ্দিক নিজ ও পরিবারের অন্য সদস্যদের মালিকানায় গুলশান-২ এ রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেন। তিনি রাজউকের আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইন না মেনে তার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিকের বিশেষ ক্ষমতায় এবং তার প্রত্যক্ষ প্রভাব ও সহযোগিতায় শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন কর্মচারীদের প্রভাবিত করে নিজ নামে প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রিমূলে প্লট গ্রহণ করেন।

এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় দুদক উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বাদী হয়ে রেহেনা সিদ্দিক, টিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ জয়, শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারি পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি শেখ রেহানা সিদ্দিক প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা হলফনামা দিয়ে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার পরও পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন এলাকায় ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন।

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্রতারণা

তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা হলফনামা দিয়ে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার পরও পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন এলাকায় ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন।

রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক

শেখ রেহানার মেয়ে আসামি আজমিনা সিদ্দিকের মামলায় বলা হয়েছে, রাউজক এলাকাধীন বাড়ি বা ফ্ল্যাটের সুবিধা থাকার পরও মিথ্যা হলফনামা দিয়ে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। তার বোন টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক বিশেষ ক্ষমতাবলে এবং শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা করে দেন এবং আসামি তাহা রেজিস্ট্রি করে দখল করে অবৈধভাবে ভোগ দখল করেন। মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার লকারে পাওয়া গেল ৮৩২ ভরি স্বর্ণ

গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানীর পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের সহকারী-পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে আজমিনা সিদ্দিক, টিউলিপ  রিজওয়ানা সিদ্দিক, শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ জয়, শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারি পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামি আজমিনা সিদ্দিক প্রতারণামূলকভাবে মিথ্যা হলফনামা দিয়ে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার পরও পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন এলাকায় ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন।