বিএনপি কখনোই ইসলামের মূলনীতির সঙ্গে আপস করেনি : তারেক রহমান
বিএনপি কখনোই ইসলামের মূলনীতির সঙ্গে আপস করেনি বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
আজ রোববার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে জাতীয় ইমাম খতিব সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি কখনোই ইসলামের মূলনীতি কিংবা মৌলিক বিশ্বাসের সঙ্গে আপস করেনি, ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও করবে না।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমরা সবাই জানি, আইয়ামে জাহেলিয়ার সময়ে আমাদের মহানবীকে (সা.) যারা অপছন্দ করতো তারাও মহানবীকে ন্যায়পরায়ণ হিসেবে মানতো এবং বিশ্বাস করত। মহানবীর ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে মুসলমান-অমুসলমান বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কারও মধ্যেই কোনো সংশয় ছিল না। মহানবীর সেই ন্যায়পরায়ণতার আদর্শ সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র এবং সরকার পরিচালনায় বিএনপির মূল মন্ত্র হবে ইনশাআল্লাহ।
মহানবীর ন্যায়পরায়ণতার আদর্শ উজ্জীবিত একটি ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি দেশের সকল সম্মানিত ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিন-আলেম-ওলামা-পীর-মাশায়েকদের দোয়া এবং সমর্থন চায়।
জাতীয় ইমাম খতিব সম্মেলন কমিটির সদস্য সচিব মুফতি আজহারুল ইসলাম ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। এ বিষয়ে তারেক বলেন, আপনাদের উপস্থাপিত দাবির বেশ কয়েকটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূরণ করার সব রকমের সুযোগ রয়েছে বলে আমি মনে করি। আপনারা ইমাম-খতিব-মুয়াজ্জিনদের জন্য সার্ভিস রুল প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন। আপনাদের এই দাবিটি অত্যন্ত যৌক্তিক।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে বিএনপি এমন একটি কল্যাণমূলক সমাজ, সরকার এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে যে রাষ্ট্র সমাজে মুসলমানগণ নিঃসংকোচে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন, নির্ভয়ে নিরাপদে ইবাদত বন্দেগি করতে পারবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিএনপি বরাবরই ইসলাম এবং মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী যেকোন অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার। পতিত, পরাজিত, পলাতক স্বৈরাচার ইসলাম, মুসলমান এবং ইসলামী সংস্কৃতিকে রাষ্ট্র এবং সমাজে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা করেছিল। আপনাদের এখানে যারা আজকে উপস্থিত আছেন আপনাদের অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে যে, ২০২৪ সালে পবিত্র রমজান মাসে হঠাৎ করে মুসলমানদের ধর্মীয় সংস্কৃতি ইফতার মাহফিল আয়োজনের উপরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।
এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি ছিল বাংলাদেশের ইসলামবিরোধী, ইসলামের মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুদূর প্রসারী ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। সেই সময় বিএনপি অপতৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। ২০১৩ সালে রাজধানীর শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উপরে হানাদার বাহিনীর মতন ক্র্যাকডাউন চালানো হয়েছিল। গণহত্যার প্রতিবাদে এবং হেফাজতে ইসলামের সমর্থনে বিএনপি সারাদেশে দুইদিন হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল তখন।
তারেক রহমান বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে আল্লাহর রহমতে বিএনপির রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরকে সম্মানী দেওয়ার পরিকল্পনা পর্যায়ক্রমে ইনশাল্লাহ আমরা বাস্তবায়ন করব। একই সঙ্গে ইমাম-মুয়াজ্জিনদেরকে আর্থিকভাবে আরো স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে ইমাম মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করে আরও বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ, দুর্যোগ প্রতিরোধে ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সম্পৃক্ত করার বিভিন্ন চিন্তাভাবনা বিএনপির রয়েছে।
সম্মিলিত ইমাম খতিব পরিষদের আহ্বায়ক বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহির বাকী নদভীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ, হেফাজতের মাওলানা জোনায়েদ আল হাবিব, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মুফতি হাবিবুর রহমান কাশেমী, মুফতি বশির উল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, নেজামী ইসলাম পার্টি মুফতি মুসা বিন ইজহার, শায়খ আহমদুল্লাহ, মাওলানা মুনির হোসাইন কাশেমী, মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, মাওলানা আবদুল্লাহ বিন আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা গোলাম রাব্বানীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ইমাম-খতিব সাহেবেরা বক্তব্য রাখেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক