ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে বাবা-ছেলেসহ নিহত ৫, আহত অর্ধশতাধিক
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীতে বাবা-ছেলেসহ মোট পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। ভূমিকম্পে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।
শহরের গাবতলী এলাকায় একটি ছয়তলা নির্মাণাধীন ভবনের দেয়াল ধসে পাশের একতলা ভবনের ওপর পড়ে বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন, তার ছেলে ওমর ফারুক এবং মেয়ে তাসফিয়া আহত হন। তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দেলোয়ার ও তার ছেলেকে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবা-ছেলে দুজনই মারা যান।
পলাশ উপজেলার মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামে মাটির ঘরের দেয়াল চাপায় কাজম আলী (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহতের চাচাতো ভাই আউয়াল মিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের আসকিতলা গ্রামে ভূমিকম্পের সময় গাছে উঠে ডালা কাটার কাজ করছিলেন ফুরকান মিয়া। হঠাৎ ঝাঁকুনি অনুভূত হলে তিনি গাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. ফারজানা ইয়াসমিন।
এছাড়া পলাশের ডাঙ্গা কাজিরচর এলাকায় সিরাজ উদ্দিনের ছেলে নাসির উদ্দিন (৬৫) ভূমিকম্পের তীব্রতায় আতঙ্কিত হয়ে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান।
ভূমিকম্পে নরসিংদী শহর ও পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল অঞ্চলে বহু ভবন, দোকানপাট ও স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। ঘোড়াশাল এলাকায় ছয়টি বাড়ি এবং এস এ প্লাজা নামে সাততলা একটি শপিংমলে ফাটল ধরে। ঘোড়াশাল বাজারের বিভিন্ন ভবনের ছাদ ও দেয়ালের অংশ খসে পড়ে দোকানপাটের মালামালের ক্ষতি হয়। পলাশ রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজের মাঠে মাটিও দেবে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলেন, ভূমিকম্পে তাদের দোকানের মালামাল পড়ে ভেঙে গেছে এবং লোকজন আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে দেয়।
ঘোড়াশাল ঈদগাহ রোডের মারকাসুল সুন্নাহ মাদ্রাসার ছয়তলা ভবনের চার-পাঁচটি স্থানে ফাটল দেখা গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মুফতি সালা উদ্দিন আনসারী। ভবনের মালিক আমানউল্লাহ বলেন, ক্ষতির কারণে সব দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনের একটি ট্রান্সফরমারে আগুন লাগে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয় এবং অন্যান্য ট্রান্সফরমারের বেশ কিছু সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পলাশ ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানান সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুস সহিদ। ঘটনার পর ঘোড়াশাল ও পলাশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বিকল্প উপায়ে সঞ্চালন পুনরায় চালুর চেষ্টা করছে।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গুলশানা কবির বলেন, ভূমিকম্পে আহত হয়ে অর্ধশতাধিক মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখনও আহতরা হাসপাতালে আসছেন।
নরসিংদী পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম দুপুরে গাবতলী এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থান পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ভূমিকম্পে জেলায় অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। যেকোনো দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে নরসিংদী জেলা পুলিশ।

বিশ্বজিৎ সাহা, নরসিংদী