অধ্যাদেশ জারির পর গণভোট নিয়ে পদক্ষেপ নেবে ইসি
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট হবে—প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে এমন আয়োজনের ঘোষণা এলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) অপেক্ষায় আছে গণভোট সংক্রান্ত অধ্যাদেশের (আইন)। অধ্যাদেশ জারির পর গণভোট সংক্রান্ত করণীয় বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে ইসি।
ওপরের কথাগুলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের।
আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বিএনপিসহ ছয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে বসে ইসি। চতুর্থ দিনের মতো চলা এ সংল্পের সমাপনী বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন। সংলাপে রাজনীতিবিদরা বারবার গণভোটের ব্যাপারে সিইসির কাছে জানতে চান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এ সময় সংলাপে উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে চার দিনে ৪৮টি দলের সঙ্গে মতবিনিময় করল ইসি।
আজ বিকেলে সমাপনী বক্তব্যে সিইসি বলেন, ওই আইনটা হলে তখন আমার একটা দায়বদ্ধতা আসবে, এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার। আমি তো এখনও এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার কিছু নেই। তবে রাজনীতিবিদরা অনেকে জিজ্ঞাসা করছেন—কীভাবে করবেন, কীভাবে (ভোটাররা) এগুলোর জবাব দেবে, কতটা বাক্স করবেন। এসব নিয়ে চিন্তা, এক্সারসাইজ শুরু করব আমরা ওই আইনটা হওয়ার পরে।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, কিছু মনে করবেন না, রাজনীতিবিদদের টাইম মেনটেইন করানো মুশকিল। আপনাদের কাজই তো বক্তব্য দেওয়া।
৭৩ বয়সী সিইসি সৌভাগ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, বয়স হওয়ার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিবিদদেরও দেখে এসেছি, ছাত্রাবস্থায় মান্না ভাইকে পেয়েছিলাম নেতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে, স্যারের (মঈন খান) সাথে তো চাকরিই করেছি। রাজনীতিবিদদের সাথে ডিল করতে করতে এবং এ দেশের ইলেকশন দেখতে দেখতে, পাকিস্তান আমল থেকে দেখে এসেছি—বেসিক ডেমোক্রেসি থেকে সব কিছু। অভিজ্ঞতাও কম হয়নি।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ইলেকশন নিয়ে আমাদের কম অভিজ্ঞতা হয়নি। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা হয়েছে। শুধু আমাদের উচিত হবে—এ দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সামাজিক বাস্তবতাটা মেনে নিয়েই আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে।
রাজনৈতিক বাস্তবতা কী রাজনীতিবিদরা জানেন বলে উল্লেখ করেন সিইসি। নাসির উদ্দিন বলেন, আমি আর খোলাসা করে বলতে চাই না। এগুলোর হিটওয়েভ আমি ফিল করি এখানে বসে। রাজনৈতিক বাস্তবতার হিটওয়েভটা আমাকে ফিল করতে হয়, কারণ এটা খুব মসৃণ বাস্তবতা নয়। সামাজিক বাস্তবতাও সেরকম। এগুলো বিবেচনায় নিয়েই আমাদেরকে এগোতে হচ্ছে।
বাস্তবতা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত
বিরাজমান পরিস্থিতিতে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাস্তবতার বিবেচনার কথাও তুলে ধরেন সিইসি। রাজনীতিবিদদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যেকোনো নির্বাচন কমিশনের পক্ষে, আপনাদেরও যদি এখানে বসিয়ে দিই, এগুলোকে ইগনোর করে যাওয়া সম্ভব নয়। বাস্তবতা যেটা আছে সেটা বিবেচনায় নিয়ে স্মার্টলি ইউ হ্যাভ টু ট্রাই টু ওভার কাম দ্য চ্যালেঞ্জেস। একদম ইগনোর করে যাওয়া সম্ভব না বাস্তবতাটা।
সিইসি আরও বলেন, সবদিক থেকে বাস্তবতা আছে। সামাজিক বাস্তবতা। সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে আমরা সেই স্লো অ্যান্ড স্টিডি ওয়েতে। কথা কম কাজ বেশি সেইভাবে এগিয়ে যাচ্ছি। এ পর্যন্ত ইনশা-আল্লাহ সাকসেসফুলি এগোতে পেরেছি।
গেল বছর সংস্কার কমিশনের কাজ শুরু হয়। আর বছরের ফেব্রুয়ারতে শুরু হয় ঐকমত্য কমিশন। অক্টোবরে তারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখনও সুপারিশ গণভোটের অপেক্ষা। এরই মধ্যে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলেছে।
সিইসি বলেন, সবকিছু যদি ঐকমত্য কমিশনের জন্য বসে থাকতাম, আমি জানি না ইলেকশন আদৌ করতে পারতাম কিনা, এখনও তো চূড়ান্ত হয়নি।
ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একইদিনে করার ঘোষণা দিয়েছেন। সিইসি বলেন, গণভোটের কথা এসেছে। রেফারেন্ডামটা, কীভাবে ভোট করব। আগে আইনটা তো হতে হবে। রেফারেন্ডামের একটা ল’ ওখানে বলা আছে, ঘোষণার মধ্যে, অর্ডারের মধ্যে একটা আইন হবে রেফারেন্ডাম যেটা ইলেকশন কমিশনকে অথরাইজড করবে। প্রেসক্রাইব করে দেবে-কী বিষয়ে গণভোট হবে, কীভাবে হবে ইত্যাদি।
সিইসি জানান, ওই আইনটা তো হতে হবে। ওই আইনটা হলে তখন আমার একটা দায়বদ্ধতা আসবে এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার। আমি তো এখনও এ ব্যাপারে বক্তব্য দেওয়ার। কিন্তু রাজনীতিবিদরা অনেক জিজ্ঞাসা করছেন-কীভাবে করবেন, কীভাবে এগুলোর জবাব দেবে, কতটা বাক্স করবেন।
এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, এগুলোর সব চিন্তা, এক্সারসাইজ শুরু করব আমরা ওই আইনটা হওয়ার পরে। এর আগে তো আমি জানি না, হোয়াট কোর্স ইট উইল টেক।
আজ বুধবার দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি), বাসদ মার্কসবাদীর সঙ্গে সংলাপ করেছে ইসি।

নিজস্ব প্রতিবেদক