আজ প্রবাসীদের জন্য চালু হচ্ছে ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ
দেশে দীর্ঘদিন অনেক মানুষ নিয়মিত ভোট দিতে না পারলেও গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে গঠিত সরকার এবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের আওতায় আনতে চায়। সেই লক্ষ্যেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রথমবারের মতো চালু করতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপ। তবে প্রযুক্তিগত জটিলতা, গোপনীয়তা এবং যাচাইকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশন ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের হলরুমে অ্যাপটির উদ্বোধন হবে। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, প্রবাসী সংগঠনের প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিসহ ৫০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সন্ধ্যা ৬টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসিরউদ্দিন অ্যাপের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। একইসঙ্গে শুরু হবে নিবন্ধন কার্যক্রম।
ইসির তথ্য অনুযায়ী, প্রবাসীরা ধাপে ধাপে অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারবেন। পোস্টাল মাশুল ৫০০ টাকা এবং আনুষঙ্গিক খরচসহ একজন ভোটারের ব্যয় হবে ৭০০ টাকা। তবে আন্তর্জাতিক এসএমএস সিস্টেমে সহজে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) নিশ্চিত করা, নির্বিঘ্ন নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করা এবং পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা- এই তিনটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে ইসি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসিরউদ্দিন বলেছেন, স্বাধীনতার পর কোনো সরকার ও কমিশন প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করেনি। কিন্তু নানা চ্যালেঞ্জ জেনেও আমরা স্বল্পসময়ের মধ্যে এই উদ্যেগ নিয়েছি। এটা ঐতিহাসিক। পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোট নিয়ে গোপনীয়তার চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো সানাউল্লাহ।
ইসি জানিয়েছে, শুধু বিদেশে বসবাসকারীরাই নন- দেশে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী (যারা আইবাসের মাধ্যমে বেতন পান), প্যানেলভুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তা এবং কারাবন্দিরাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন। সবার জন্যই ব্যবহৃত হবে একই অ্যাপ- ‘পোস্টাল ভোট বিডি’।
১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৪৩টি দেশের সঙ্গে নিবন্ধন সম্পন্ন করার জন্য মোবাইলে এসএমএস ওটিপি নিশ্চিত করতে পেরেছে ইসি। বাকিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ছাড়াই আজ চালু করা হচ্ছে নিবন্ধন অ্যাপ। এর ফলে বাকি দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশীদের ভোট দেওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
অ্যাপে যেভাবে নিবন্ধন করবেন
‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপটি ইনস্টল করার পর ভোটারকে নিম্নের ৯টি ধাপ শেষ করতে হবে : ভাষা নির্বাচন করে ‘রেজিস্ট্রেশন করুন’ বাটনে ক্লিক, যে দেশ থেকে আবেদন করা হচ্ছে সে দেশের নাম নির্বাচন, মোবাইল নম্বর দিয়ে ওটিপি ভেরিফিকেশন, অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড সেট, মোবাইল নম্বর দিয়ে লগইন, মুখমণ্ডলের লাইভ ফেস ভেরিফিকেশন, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট তথ্য প্রদান, বিদেশের পূর্ণ ঠিকানা যুক্ত করা, এনআইডি হাতে নিয়ে সেলফি আপলোড, অ্যাকাউন্ট যাচাই হয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে লাগবে সর্বোচ্চ ১০-১৫ মিনিট।
সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
ইসি মনে করছে, প্রবাসী নিবন্ধনের হার বৈশ্বিক গড়ের মতো হতে পারে (২-৩ শতাংশ)। তবে বাংলাদেশিদের আগ্রহ তুলনামূলক বেশি। চ্যালেঞ্জগুলো- ভোটের গোপনীয়তা রক্ষা, সময়মতো ব্যালট ফেরত পাঠানো, শেষ মুহূর্তে আদালতের রায়ে প্রার্থিতা পরিবর্তিত হলে সংশ্লিষ্ট আসনের সব প্রবাসীর ভোট বাতিল হওয়ার ঝুঁকি এবং ঠিকানা ভুল হলে ব্যালট পৌঁছাবে না।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, অ্যাপের নিরাপত্তা, ফেস ভেরিফিকেশন, লোড ম্যানেজমেন্ট- সবই চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, প্রথম চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে নতুনত্বের। এখানে টুকটাক ঝামেলা থাকতে পারে, সবাইকে সহায়তা করতে হবে। আমরা গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও সময়সীমা- তিনটি বিষয়ে সবচেয়ে কঠোর থাকছি। ধীরে ধীরে সবাই এই পদ্ধতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে- আমরা ব্যর্থ হব না।
ব্যালট ছাপানো ও নিরাপত্তা
পোস্টাল ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যালট ছাপানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর্মি প্রিন্টিং প্রেসকে। প্রাথমিকভাবে ছাপানো হবে ২০ লাখ ব্যালট, লক্ষ্য ৫০ লাখ। ইসি সানাউল্লাহ বলেছেন, অনেক দেশে পোস্টাল ব্যালটের ওয়েস্টেজ রেট ২৪ শতাংশ। ঠিকানা ভুল, সময়মতো না পাঠানো- এ ধরনের ঝুঁকি কমাতে নিরাপত্তা ও ট্র্যাকিংকে আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।
ফিরতি খামের ভোটের গোপনীয়তা রক্ষায় ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন (ইউপিইউ) ও ডাক বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিমানবন্দর থেকে সংরক্ষণ করা হবে। সেখান থেকে সেনাবাহিনীসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় স্ব স্ব ভোটারের ব্যালটটি আসনওয়ারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠানো হবে।
প্রতীক বরাদ্দের পর ভোট প্রক্রিয়া
প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর ভোটারগণ প্রাপ্ত ভোটটি দেবেন। এরপর সেটি ডাকযোগে দেশে পাঠাবেন। এর জন্য তিনটি খাম পাঠানো হবে- (খাম ১) ফেরত খাম, (খাম ২) ব্যালট পেপারসংবলিত খাম, (খাম ৩) প্রয়োজনীয় ঘোষণা ও নির্দেশনাপত্র। ব্যালটে থাকবে কেবল প্রতীক। ভোটারের কোনো খরচ নেই।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, আগামীকাল ১৮ নভেম্বর ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপটি উদ্বোধনের পর ইউরোপ-আমেরিকা-মধ্যপ্রাচ্যসহ ভৌগোলিক অঞ্চলভিত্তিক ‘ফেজড’ নিবন্ধন চালু হবে। নিবন্ধনের জন্য সময়সীমা মোট চার সপ্তাহ।

নিজস্ব প্রতিবেদক