শক্তিশালী ঘাঁটিতে জামায়াত-এনসিপির ভিড়ে হুমকির মুখে ধানের শীষ
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও নওগাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নওগাঁ-৫ (নওগাঁ সদর) আসনটির প্রার্থী ঘোষণা এখনও বাকি রয়েছে। এই আসনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় প্রার্থী হিসেবে যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিনের নাম ঘোষণা করেছে।
গুঞ্জন উঠেছে, এনসিপির সঙ্গে বিএনপির জোট হলে নওগাঁ-৫ আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী থাকবে না, যা নিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা আর ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রয়েছেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আ স ম সায়েম।
তৃণমূলের ক্ষোভ ও হুমকির মুখে বিএনপির ঘাঁটি
বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নওগাঁ-৫ আসন বহু বছর ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই আসনটি শরিক দলকে ছেড়ে দিলে নওগাঁ সদর আসনে বিএনপির রাজনীতি হুমকির মুখে পড়বে। মূলত তৃণমূল নেতাকর্মীদের ত্যাগ, আন্দোলন ও দীর্ঘ সংগ্রামের ওপর ভর করে এই আসনের রাজনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে শরিক দলকে আসনটি ছেড়ে দিলে বিএনপির জনসমর্থন সংকটে পড়বে এবং ত্যাগী নেতাকর্মীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
নওগাঁ সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আল কাফী তুহিন বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনের সুযোগ দিলে এখানে ধানের শীষ বিপুল ভোটে জয়ী হবে। দলের শক্ত অবস্থান থাকা সত্ত্বেও শরিক দলকে আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে আমাদের সঙ্গে চরম অন্যায় হবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের জন্য চরম হতাশার বিষয় হবে।’
নওগাঁ সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য সারওয়ার কামাল চঞ্চল (বক্তারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান) বলেন, ‘তৃণমূলের কর্মী হিসেবে দলের হাইকমান্ডের কাছে আমাদের চাওয়া—বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে এখানে সবচেয়ে ত্যাগী এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হোক।’
প্রার্থী নিয়ে গুঞ্জন ও হাইকমান্ডের প্রতি প্রত্যাশা
নওগাঁ সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ৪৪ হাজার ১৪৭ জন। এই আসনের প্রায় অর্ধেক ভোটার নওগাঁ পৌরসভা এলাকায়, যেখানে বিএনপি পরপর তিনবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আজম রানা বলেন, ‘নওগাঁ-৫ আসন শরিক দলকে ছেড়ে দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সে রকম কিছু হলে নেতাকর্মীরা হতাশ হবেন। দলের হাই কমান্ডের কাছে আমাদের প্রত্যাশা এখানে যেন ধানের শীষের প্রার্থী থাকে।’
বর্তমানে এই আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে ছয়জন নেতার নাম আলোচনায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজমুল হক, বর্তমান সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন বলেন, ‘আমরা এখনও আশাবাদী, আমাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা মূল্যায়ন করে বিএনপি এখানে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ সমর্থকেরা ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন।’
বিশ্লেষকদের অভিমত
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক লেফটেনেন্ট কর্নেল (অব.) আবদুল লতিফ খান বলেন, নিজেদের দুর্গে আসন ছাড় দিলে বিএনপির রাজনীতি হুমকির মুখে পড়বে এবং এর সুযোগ নেবে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল জামায়াত। জামায়াত ও এনসিপির কেউ একবার এই আসন নিজেদের দখলে নিলে ভবিষ্যতে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি। তাই জোটের শরিকদের জন্য এ আসন ছাড় দেওয়ার আগে অন্তত হাজারবার ভাবা উচিত দলটির নীতি নির্ধারকদের।

আসাদুর রহমান জয়, নওগাঁ