সম্পত্তি ছেলের দখলে, আদালতের আশ্রয় চাইলেন বৃদ্ধ শিক্ষক
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আজ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সারা জীবনের পরিশ্রমে গড়া সব সঞ্চয়, জমিজমা—সবকিছু একমাত্র ছেলের হাতে তুলে দেওয়ার পর আজ সেই সন্তানই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ বৃদ্ধ দম্পতির।
দরগ্রামের এক সময়ের সম্মানিত শিক্ষক মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন। তার পাশে আছেন স্ত্রী পারুল আক্তার। যে ঘরে একদিন শিক্ষার আলো জ্বলেছে, সেই ঘরেই আজ নেমে এসেছে হতাশার অন্ধকার।
দীর্ঘ ১০ বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী এই শিক্ষক নিজের নড়াচড়া থেকে শুরু করে খাবার, সেবা—সবকিছুতেই নির্ভরশীল স্ত্রীর ওপর। অথচ অভিযোগ, সেই ছেলেই আজ বাবা-মায়ের খোঁজখবর রাখেন না। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বেলায়েত হোসেন বলেন, “ছেলের ওপর ভরসা করেই সব কিছু ওর নামে লিখে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, শেষ বয়সে পাশে থাকবে। কিন্তু আজ একবারও খোঁজ পর্যন্ত নেয় না।”
আরও পড়ুন : নবরূপে শতবর্ষী স্টিমার ‘পিএস মাহসুদ’, চলবে পর্যটকদের জন্য
স্ত্রী পারুল আক্তারও দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেন, “ওর বাবার জন্য একটি ডিম লাগলেও দোকান থেকে কিনে আনতে হয়। ১০ বছর ধরে বিছানায় থাকা স্বামীকে একা একাই সামলাই। ছেলে, বৌমা, নাতনিরা কেউ সাহায্য করে না। সব লিখে দেওয়ার পর থেকেই আমাদের প্রতি ওর অবহেলা শুরু।”
মেয়ে লাভলী আক্তার বলেন, “মা ফোন করে কাঁদে। ভাই বলে আমরা নাকি সম্পত্তি নিতে চাই, অথচ আমাদের তিন বোনের কারও বাড়ি-টাকার কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু চাই বাবা-মা যেন একটু শান্তিতে থাকে। অন্তত বাড়িটা যেন বাবার নামে ফিরিয়ে দেয়।”
শ্যালক মিজানুর রহমানের অভিযোগ করে বলেন, “বোন-দুলাভাইকে দেখাশোনা করে না। পানির লাইন নষ্ট করেছে, বাথরুমের ট্যাংকি ভেঙেছে। প্রতিদিনই মানসিক নির্যাতন করে।”
অন্যদিকে ছেলে রাজিউদ্দিন আহমেদ আঙ্গুর সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এসব মিথ্যা। বোনেরাই চক্রান্ত করছে সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে।”
এলাকার এক সাবেক ইউপি সদস্য জানান, বৃদ্ধ শিক্ষক ন্যূনতম থাকার জায়গা ফেরত পেতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। শত শত ছাত্রকে মানুষ করেছেন তিনি। আজ তিনিই মানুষের সাহায্য খুঁজছেন—এটাই সবচেয়ে বেদনাদায়ক।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলিনুর বক্স রতন আফসোসের সুরে বলেন, “বেলায়েত মাস্টার ভদ্রলোকের প্রতিচ্ছবি। এই বয়সে তার কষ্ট আমাদের লজ্জায় ফেলে। ছেলেকে বলেছি—এখনো সময় আছে, বাবা-মায়ের প্রতি দায়িত্ব পালন করো।”
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস খান মজলিস মাখন বলেন, “শিক্ষককে বলেছি—আপনি একা নন। সামাজিকভাবে না হলে আদালতের মাধ্যমে আপনার ন্যায় প্রতিষ্ঠা হবে। আপনাকে সহযোগিতা করব।”
এক জীবন পরোপকারে কাটানো শিক্ষক বেলায়েত হোসেন আজ দিশেহারা নিজের সন্তানের অবহেলায়। একসময় যিনি জ্বালিয়েছেন জ্ঞানের প্রদীপ, আজ সেই মানুষই অন্ধকার ঘরে অপেক্ষা করছেন মানবিকতার এক টুকরো আলোর।

আহমেদ সাব্বির সোহেল, মানিকগঞ্জ