জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি ও গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় আসতে না পারায় এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এ নিয়ে সিদ্ধান্ত ঘোষণা দিতে পারে সরকার।
রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতার জন্য এক সপ্তাহ সময় দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) সে সময় শেষ হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় আসেনি, এমনকি কোনো আলোচনায়ও বসেনি। এ অবস্থায় সরকার এখন নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও গণভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে জানা গেছে।
আরও পড়ুন : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে আপিলের রায় ২০ নভেম্বর
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে গত ২৭ অক্টোবর দুটো সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এরপরই গণভোট, নোট অব ডিসেন্ট, পিআর পদ্ধতিসহ কয়েকটি বিষয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে চলে যায় বড় দুই দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।
৩ নভেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে সমঝোতায় পৌঁছাতে এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়; কিন্তু দলগুলো সমঝোতায় আসেনি। জামায়াতে ইসলামী আলোচনার ডাক দিলেও বিএনপি তাতে সাড়া দেয়নি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কোনো দল নয়, সরকার ডাকলে আলোচনায় অংশ নেবে তারা।
দলগুলোকে দেওয়া সময় শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে আজ বৈঠকে বসছে উপদেষ্টা পরিষদ। তবে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে, বৈঠকটি বিশেষ নয়। নির্বাচনসহ দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা তার পরিষদের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের নিয়ে যমুনায় আলোচনা করেন। এই বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকের অ্যাজেন্ডা চূড়ান্তকরণসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তারই অংশ হিসেবে আজকের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। অনানুষ্ঠানিকভাবে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, আজকের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও সাধারণত অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান উপস্থিত থাকেন। এ ছাড়া প্রয়োজন সাপেক্ষে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর পরিষদের অন্যান্য উপদেষ্টাকে ডাকেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন : তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত আপিলের শুনানি পর্যবেক্ষণ নেপালের প্রধান বিচারপতির
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আলোচনার জন্য সরকারের বরাদ্দ করা সাত দিনের সময়সীমা শেষ হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নেই। জুলাই সনদ ও গণভোট বিষয়ে সরকার শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানাবে।
জাতীয় নির্বাচন আর গণভোট একসঙ্গে করা বা আগে করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সরকার একসঙ্গে বসে সামষ্টিকভাবে এ সিদ্ধান্তটা নেবে। আপনাদের খুব দ্রুতই এটা আমরা জানিয়ে দেব।’ নির্বাচনের আগে গণভোট করার কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যক্তিগত মতামত দেওয়ার কোনো সুযোগই আমার নেই। সরকারের অংশ হিসেবে আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। সরকার যখন বসবে, এ বিষয়ে আলোচনা করবে। আলোচনা করে যখন সিদ্ধান্ত হবে, তখন সেটা আপনারা জানবেন।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির পাশাপাশি বাস্তবায়নে দুটো বিকল্প প্রস্তাব দেয় সরকারকে। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গণভোটের আগে সরকার জাতীয় সনদের ভিত্তিতে একটি খসড়া বিল প্রস্তুত করবে, যা গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। ফলাফল ইতিবাচক হলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একযোগে এমপি ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবেন; নির্ধারিত সময় পার হলে বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে বিলের কথা বলা নেই। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়। সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার শেষ করবে ও এরপর পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে। দুটি প্রস্তাবেই সংস্কার পরিষদের কার্যক্রম শেষ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে পিআরের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক