‘দুই বছর পর ইলিশ মাছ দিয়ে পেট ভইরা ভাত খাইলাম’
‘দুবেলা খাবার জোগাড় করাই মুশকিল, ইলিশ মাছ কিনবো কি দিয়া’ কিংবা ‘দুই বছর পর ইলিশ মাছ দিয়ে পেট ভইরা ভাত খাইলাম’ -কথাগুলো পাবনা শহরের দ্বীচরের স্বামী পরিত্যক্তা রানী খাতুনের। একই অভিব্যক্তি রামচন্দ্রপুরের মাহমুদা, কাচারীপাড়ার কলি খাতুন, ঘোষপুরের রমেছা বেওয়া, রজব আলী, সুলতানা, ইসলাম হোসেনসহ অনেকের। তাদের কাছে ইলিশ যেন সোনার হরিণ, কারও কাছে আকাশের চাঁদের মতো অধরা।
কেউ বিধবা, কেউ স্বামী পরিত্যক্তা, কেউ ভিক্ষুক, কেউবা গৃহপরিচারিকা। তবুও একবেলা পেটভরে ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে তারা আজ মহাখুশি।
গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে পাবনা শহরের কালাচাঁদপাড়ায় তহুরা আজিজ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত হয় ব্যতিক্রমধর্মী ‘গরিবের ইলিশ উৎসব’। পরিচালক দেওয়ান মাহবুবুল ইসলামের নেতৃত্বে নিজ বাড়ির আঙিনায় বাবুর্চি দিয়ে রান্না করা হয় ইলিশ-পটল-আলুর তরকারি, খাসির মাংস ও মিষ্টান্ন।
এ আয়োজনে প্রায় শতাধিক হতদরিদ্র মানুষকে আপ্যায়ন করা হয়। এতে ব্যবহৃত হয় ২৭ কেজি চাল, ১৬ কেজি ইলিশ, ১০ কেজি খাসির মাংস ও ৫ কেজি রসগোল্লা ও রাজভোগ। খড়ির চুলায় রান্না করেন বাবুর্চি দুলাল মিয়া ও স্বেচ্ছাসেবকরা। গরিব মানুষদের সম্মান দিয়ে তাদের চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে পরিবেশন করা হয় খাবার।
আয়োজকদের ভাষ্য, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে অনেকেই দুই বেলার খাবার সংগ্রহ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। সেখানে ইলিশের মতো দামি মাছ তাদের কাছে স্বপ্ন। জাতীয় মাছ হলেও ইলিশ এখন কেবল উচ্চবিত্তের প্লেটে। এই উৎসব তাই একধরনের প্রতিবাদও।
অনেকেই বলেন, দীর্ঘ দুই বছর ইলিশ দিয়ে পেটভরে ভাত খাওয়ার সুযোগ পাননি। তাই দেওয়ান মাহবুবের এমন আমন্ত্রণে তারা এসেছেন। কারও কারও মুখে ছিলো চোখে জল, কারও মুখে অগাধ কৃতজ্ঞতা।
রামচন্দ্রপুরের মাহমুদা খাতুন বলেন, এক সময় বাবা শাক বিক্রি করে হালি করে ইলিশ কিনতো। এখন ইলিশের দাম কত, সেটাও জানি না।
সংগঠনের সদস্য আবু বকর জানান, তারা নিয়মিত অসহায় মানুষের পাশে থাকেন। পাবনা ড্রামা সার্কেলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান রাসেল বলেন, এমন ব্যতিক্রমী ইলিশ উৎসব পাবনায় আগে কখনও দেখিনি। তিনি বলেন, সরকার ও প্রশাসনের উচিত বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে ইলিশ সাধারণের নাগালে নিয়ে আসা।
ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা দেওয়ান মাহবুব জানান, তারা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ, সেহরি ও কোরবানির মাংস বিতরণসহ নানা সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য আয়োজন করলেন ইলিশ দিয়ে একবেলার খাবার।
তার মতে, ইলিশ মাছ এখন এমন এক সম্পদ যা দেশের গরিব মানুষদের নাগালের বাইরে চলে গেছে। অথচ এটি জাতীয় মাছ। এ উদ্যোগ একটি নীরব প্রতিবাদ, যেন সমাজের সব শ্রেণির মানুষ অন্তত একবেলা হলেও এই স্বাদ পেতে পারে।

এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা