আদালতে মাদক মামলার হার সবচেয়ে বেশি
ঢাকার আদালতসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে মাদক মামলার হার সবচেয়ে বেশি। এছাড়া প্রশাসন জিরো টলারেন্সের কারণে মাদক মামলার আসামিরা অহরহ গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পরে কিছুদিন জেল খেটেই আসামিরা বের হয়ে যান। তবে নানা আইনি জটিলতার কারণে আসামিরা খালাস পেয়ে যায়।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) ঢাকার সিএমএম কোর্ট, মহানগর দায়রা জজ, জেলা ও দায়রা জজ ও চিফ জুডিশিয়াল আদালতের বিভিন্ন বিচারিক আদালতে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। মাদক মামলার খালাসের প্রধান কারণ হিসেবে দেখা গেছে সাক্ষীদের অনীহা, জব্দ তালিকা প্রস্তুতে গরমিল, এজাহার ও তদন্তে ত্রুটিসহ নানা কারণ।
ঢাকার পরিবেশ আপিল আদালতের একটি নথিতে দেখা গেছে, ২০০৯ সালের ১২ মে খিলক্ষেত থানার নিকুঞ্জ এলাকা থেকে ১৪৪ ক্যান বিয়ার উদ্ধার করা হয়। এরপরে খিলক্ষেত থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়। মামলায় অনক কুমার দাশ ও শাহীনকে আসামি করা হয়। এরপরে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে আসলে মামলাটি পরিবেশ আপিল আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
নথি থেকে আরও জানা গেছে, মামলার অভিযোগ গঠনের পরে ১৬ বছরেও একটি মামলার সাক্ষীও আদালতে আসেনি ও মামলার বিচার নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি আবুল কালাম আজদ বলেন, মাদক মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষী অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষীদের আদালতে হাজিরা দিতে অনীহা, আবার মামলায় তাদের সঠিক নাম ঠিকানা না থাকায় অনেক সময় আদালতে সাক্ষী হাজির করা যায় না। আবার সাক্ষীদের কোনো ধরনের যাতায়াত খরচ দেওয়ার বিধান নেই। এ কারণে কেউ সাক্ষী হলেও আদালতে সাক্ষী দিতে যেতে চান না। আবার যারা যান, তাদের কেউ কেউ আসামিপক্ষের সঙ্গে আঁতাত করে আসামির পক্ষে কথা বলেন। এসব কারণে মূলত মামলা থেকে আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। তবে আগের চেয়ে মামলায় সাজার হার কিছুটা বেড়েছে। আগে আরও নাজুক অবস্থা ছিল।
এদিকে আদালতের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তার দক্ষতার অভাবে মাদক মামলার আসামিদের অপরাধ প্রমাণ করা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সতর্ক থাকা হচ্ছে যাতে কোনো ধরনের ত্রুটিপূর্ণ মামলা না হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর ফারুক আহম্মেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, মাদক মামলায় সাক্ষী খুঁজে না পাওয়ার কারণে মামলায় সাজা কম হয়। এছাড়া বিচারে অনেক দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়। দ্রুত সময়ে মাদক নির্মূল করতে গেলে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে ও দীর্ঘমেয়াদী প্লান হাতে নিতে হবে। প্রথমে সঠিক সাক্ষী নির্ধারণ করতে হবে পুলিশ বা প্রশাসনকে। এছাড়া শুধু মাদকের জন্য আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে। তাহলে দ্রুত সময়ে মাদক মামলার বিচার করা সম্ভব হবে।
এদিকে ডিএমপি সদর দপ্তরের মাদকের মামলায় খালাস পাওয়া আসামির সঠিক পরিসংখ্যান নেই। তবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মোবাইলকোর্টের তথ্যমতে, ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত—১৩ বছরে সারা দেশে অধিদপ্তরের করা ৩৯ হাজার ৮৫৯টি অভিযান হয়েছে। যার মধ্যে ১৯ হাজার ২৩৮ মামলায় আসামি করা হয়েছে এবং আসামি করা হয়েছে ১৯ হাজার ২৫৩টি।

নিজস্ব প্রতিবেদক