বিনিয়োগ ঝুঁকিতে তবুও বাড়ছে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের দর
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়িয়েছে ৪২ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসেবে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ এখন ঝুঁকিতে। এর মধ্যেও কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকহারে বাড়ছে। গত ২০ কর্মদিবসে কোম্পানির শেয়ার দর কারণ ছাড়াই বেড়েছে ৭৩ শতাংশ। বিনিয়োগে ঝুঁকিপূর্ণ এই কোম্পানিটির শেয়ার দর এতো বৃদ্ধির বিষয়টি ইতোমধ্যে নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে সিকিউরিটিজ হাউজগুলোতে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের প্রতি শেয়ারের সমাপনী দর দাঁড়ায় ১১৩ টাকা ৪০ পয়সা। আগের মাসের ৯ অক্টোবর শেয়ার দর ছিল ৬৫ টাকা ৬০ পয়সা। গত ২০ কর্মদিবসে ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৪৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ৭২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা তিন কোটি এক লাখ ৮৭ হাজার ৮০টি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার কোম্পানির মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন দাঁড়ায় ৩৪২ কোটি ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৮৭২ টাকা। যা গত ৯ অক্টোবর বাজারে মূলধন ছিল ১৯৮ কোটি দুই লাখ ৭২ হাজার ৪৪০ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে মোট শেয়ারের মাধ্যমে বাজারে মূলধন বেড়েছে ১৪৪ কোটি ২৯ লাখ ৪২ হাজার ৪৩২ টাকা।
কারণ ছাড়াই শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জানিয়ে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ারধারন করা পাপলু জামান ও আবিদ হাসান বলেন, মন্দা বাজারেও গত ২০ কর্মদিবস ব্যবধানে শেয়ারটির দর বেড়েছে ৭৩ শতাংশ। আলোচিত সময় মোট শেয়ারে বাজার মূলধন বেড়েছে ১৪৪ কোটি টাকা। কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়ে গত বৃহস্পতিবার দাঁড়ায় ১১৩ টাকার বেশি। ভাবছি কি হচ্ছে এই শেয়ারটিতে। কারা কিনছে বা কেন কিনছে। শেয়ার দর সামনে কোন অবস্থায় যাবে, শেয়ার এখনই বিক্রি করবো, নাকি ধরে রাখবো। অবশ্য ইতোমধ্যে সিকিউরিটিজ হাউজের বিভিন্ন জনের কাছে শোনা যাচ্ছে, শেয়ারটির দর আরও বাড়বে। সবমিলিয়ে এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ নিয়ে বিপাকে পড়েছি আমরা। তাই কোম্পানিটির শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে রেগুলেটরদের বিশেষ অনুরোধ করেন তারা।
শেয়ার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কোম্পানির সচিব তৌহিদুল ইসলাম বলেন বলেন, আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ার দর কেন বাড়ছে, সেই বিষয়ে আমার তথ্য জানা নেই। শেয়ার দর বাড়ার মতো কোম্পানিটিতে এখন কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। ইতোমধ্যে সর্বশেষ প্রান্তিকে কোম্পানি লোকসান থেকে মুনাফায় ফিরছে। বেড়েছে সম্পদমূল্যসহ নগদ প্রবাহ।
গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে কোম্পানিটির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) দাঁড়ায় ৪১ দশমিক ৬৯ পয়েন্টে। পিই রেশিও অনুসারে কোম্পানিতে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ ঝুঁকিতে রয়েছে। পুঁজিবাজারের কোনো কোম্পানির পিই রেশিও যদি সিঙ্গেল ডিজিটে থাকে, তাহলে সেখানে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ ধরে নেওয়া হয়। এছাড়া পিই রেশিও ডিজিট যদি ১৫ পয়েন্ট পর্যন্ত অবস্থান করে, তবে সেখানেও বিনিয়োগ নিরাপদ বলে ধরা হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসাবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। সেই হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। অর্থাৎ পিই রেশিও ৪০ এর ওপরে গেলে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। পিই রেশিও যত বাড়বে ঝুঁকির মাত্রা তত বাড়তে থাকবে।
ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২০২৬) প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদনে আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে দুই টাকা ৮৬ পয়সা। আগের অর্থবছরের (২০২৪-২০২৫) একই সময়ে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৮৮ পয়সা। আলোচিত প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছে পাঁচ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ ছিল নেগেটিভ এক টাকা ৫২ পয়সা। গত ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে চার টাকা ২৪ পয়সা। এর আগে ২০২৪-২০২৫ সমাপ্ত অর্থবছরে (জুলাই-জুন) জন্য বিনিয়োগকারীদের জন্য নো লভ্যাংশ দিয়েছিল। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছিল ১২ টাকা ৩২ পয়সা। ওই সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ হয়েছিল নেগেটিভ তিন টাকা ৫৬ পয়সা। শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছিল এক টাকা ৩৮ পয়সা।
১৯৯৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের। ‘এ’ ক্যাটাগরির এই কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি ১৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা তিন কোটি এক লাখ ৮৭ হাজার ৮০টি। রিজার্ভ ১৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে ৩৫ দশমিক ৩২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৮ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান