ইসলামী শিক্ষার সৃজনশীল জাগরণে উইটনে ‘ইসলামী স্টাডিজ প্রজেক্ট এক্সিবিশন’
বাংলাদেশের শিক্ষা অঙ্গনে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল দেশে প্রথমবারের মতো ‘ইসলামী স্টাডিজ প্রজেক্ট এক্সিবিশন’ আয়োজন করেছে। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গবেষণাভিত্তিক, সৃজনশীল ও আধুনিক শিক্ষণ পদ্ধতির সাহায্যে ইসলামী জ্ঞানের গভীরতাকে সফলভাবে উপস্থাপন করেছে। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামকে কেবল ধর্মীয় পাঠ হিসেবে নয়, বরং একটি জীবন্ত জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র হিসেবে শিশু-কিশোরদের সামনে তুলে ধরা।
আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত উইটনের চারটি ক্যাম্পাসের এক হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এই আয়োজনে অংশ নেয়। পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে যেন এক বর্ণিল শিক্ষামেলার সৃষ্টি হয়েছিল। এক্সিবিশনে প্রদর্শিত প্রজেক্টগুলো ছিল ইসলামী স্টাডিজ কারিকুলামের বাস্তব প্রয়োগের চমৎকার উদাহরণ।
বিভিন্ন স্তরের সৃজনশীল উপস্থাপনা
আর্লি ইয়ার্স ক্যাম্পাস ১– এর শিক্ষার্থীরা ‘আল্লাহর মহিমান্বিত সৃষ্টিসমূহ’, ‘পবিত্রতার ধাপ : একটি থ্রি-ডি ওযু অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘আমি একজন মুসলিম : আমার বিশ্বাস, আমার পরিচয়’ শিরোনামের প্রজেক্টের মাধ্যমে ধর্মীয় ধারণাগুলোকে চিত্র, রঙ ও মডেল দিয়ে উপস্থাপন করে।
অন্যদিকে আর্লি ইয়ার্স ক্যাম্পাস ৩–এর শিক্ষার্থীরা ‘ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ’ ও ‘ঈদ উদযাপন’ প্রজেক্টের মাধ্যমে ইসলামী চর্চাকে আনন্দমুখর ও বোধগম্য করে তোলে।
জুনিয়র স্কুল পর্যায়ে ‘ইসলামে সুন্দর আচরণ’, ‘সাওমের আত্মা’, ‘সালাত’, ‘হজ্জ’ ও ‘যাকাত’-এর মতো বিষয়গুলোর ওপর বিশ্লেষণমূলক উপস্থাপনা ছিল। এতে শিক্ষার্থীরা ইসলামী নৈতিকতা ও সমাজকল্যাণে ধর্মীয় বিধানের গুরুত্ব তুলে ধরে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল সিনিয়র সেকশন–এর প্রজেক্টগুলো। শিক্ষার্থীরা ‘হযরত মূসা (আ.) ও যাদুকরদের গল্প’, ‘জমজম কূপের ইতিহাস’, ‘লুকমান (আ.)-এর হিকমাহ’ ও ‘নবী মূসা (আ.) ও খিজির (আ.)’-এর ঘটনাকে ঐতিহাসিক, চিত্রনাট্য ও বিশ্লেষণধর্মী উপস্থাপনায় জীবন্ত করে তোলে। পুরো প্রদর্শনীজুড়ে শিক্ষার্থীরা ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি ইসলামিক দর্শন, সমাজবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিকোণও বিশ্লেষণ করেছে, যা এটিকে এক বহুমাত্রিক জ্ঞানমেলায় রূপ দিয়েছে।
এই প্রদর্শনীর সার্বিক সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন উইটন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল সাইদা মীরা তাবাসসুম। তাঁর নেতৃত্বে ভাইস প্রিন্সিপাল পারভীন কাদর, মোহসিনা নিশাত শারমিন, সাইদা নাঈম, ইনচার্জ শামীমা ইয়াসমিন ও আল-কুরআন কোঅর্ডিনেটর মুফতি মাসুম বিল্লাহসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন। তাদের এই উদ্যোগ বেসরকারি শিক্ষাক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষার প্রয়োগে এক নতুন উদাহরণ স্থাপন করেছে।
আরবি ও আল-কুরআন কোঅর্ডিনেটর মাওলানা মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘আজ আমাদের শিক্ষার্থীরা কুরআনের আয়াত ও নবীদের কাহিনি মুখস্থ করছে না; তারা চিন্তা করছে, প্রশ্ন করছে, বিশ্লেষণ করছে— যা প্রকৃত ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য। ইসলাম শুধু নামাজ বা রোজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর নির্দেশনা প্রদান করে।’
প্রধান সমন্বয়ক ও ভাইস প্রিন্সিপাল সাইদা মীরা তাবাসসুম বলেন, প্রতিটি প্রজেক্টই আমাদের প্রিন্সিপাল ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব আবদুল্লাহ জামান প্রণীত ইসলামী স্টাডিজ কারিকুলামের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। আমরা চেয়েছি শিশুদের শেখাতে যে ইসলাম কেবল আচার নয়, বরং চিন্তার, অনুসন্ধানের ও মানবতার ধর্ম।
অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি শিক্ষাবিদ, ইসলামিক স্কলার ও মিডিয়া প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক