আত্মহত্যার কারণ অনুসন্ধানে ব্যতিক্রমী আয়োজন ‘আপনি কেমন আছেন’
ক্রমবর্ধমান আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ায়, এর কারণ অনুসন্ধানে এক ব্যতিক্রমী গণসচেতনতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার (৪ মে) ‘আপনি কেমন আছেন?' শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয়।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীদের’ ব্যানারে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুল আলম মারুফ। অনুষ্ঠানের শুরুতে সম্প্রতি আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া শিক্ষার্থীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত দুর্বলতা, বিশেষ করে পর্যাপ্ত আবাসন সংকট ও কার্যকর মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অভাবকে আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেন। মেসে থাকা শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও মানসিক চাপের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সিদ্ধার্থ রায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জবির শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার একটি চিত্র তুলে ধরেন, যা উপস্থিত সকলের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী অরুণাভ আশরাফ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি জীবনধারণের জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা তাদের ওপর চরম মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান যা শিক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে।
ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগের শিক্ষার্থী সামিরা মৌ আত্মহত্যাকে ‘কাঠামোগত হত্যা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত মেডিকেল ও কাউন্সেলিং সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানান। তিনি শিক্ষকদের পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার বাইরে এসে মূল্যবোধ ও নীতির শিক্ষা প্রদানের ওপর জোর দেন এবং শিক্ষার্থীদের একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ইভান তাহসীব আত্মহত্যার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বিষয় হিসেবে না দেখে এর রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকটময় ব্যবস্থাপনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ার কথা উল্লেখ করেন এবং অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে তাদের সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে এমন একটি শিক্ষাঙ্গন গড়ে তোলার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন, যেখানে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য ও জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক