খালেদা জিয়ার সাজে শিশু শারিকা, এভারকেয়ারের সামনে কাঁদছিলেন আমেনা
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে মারা গেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সকালে এ খবর দেখার পর বাবার সঙ্গে যশোর সদর থেকে রওনা হন শারিকা ফাতেমা। ছোট শিশুটি খালেদা জিয়ার সাজে এসেছেন এভারকেয়ারে।
আজ বিকেলে শারিকা ফাতেমা এনিটিভি অনলাইনকে বলছিল, প্রথমে আমি মোবাইলফোনে দেখি খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু, আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। পরে দেখি সত্য নিউজ। তারপর আমি বাবার সঙ্গে যশোর থেকে রওনা দিই সকালেই। আমার বাবা এস্কেন্দার আলী যশোর জেলা যুবলদের প্রচার সম্পাদক।
এভারকেয়ারের সামনে ফাতেমা বলছিল, আমি বেগম খালেদা জিয়াকে ভালোবাসি। বড় হয়ে তার মতো হতে চাই। তিনি কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। দেশ ছেড়েও যাননি। দেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। দেশের জন্য অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
শারিকা ফাতেমা জানায়, খালেদা জিয়ার কথাগুলো আমার খুব ভালো লাগে। আমি যদি কখনো রাজনীতিবিদ হই, খালেদা জিয়ার মতো হতে চাই। আমি খালেদা জিয়ার সাজে এখানে এসেছি তারেক রহমান চাচ্চুকে সান্ত্বনা দিতে আর উনার অসংখ্য সন্তানের মনে সাহস যোগাতে।
কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে শারিকা বলে ওঠে, ভোট তারেক চাচ্চুকে দিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আপনার ভোট আপনি দিন, যাকে খুশি তাকে দিন। তবে, তারেক চাচ্চুর হাতকে শক্তিশালী করুন। যেন তিনি সবার ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পারেন।
শারিকা ফাতেমা খালেদা জিয়ার মতো করে কথা বলার চেষ্টা করছিল। দেশই আমার ঠিকানা, খালেদা জিয়ার এ কথাগুলো ফাতেমা বলছিল সবার সামনে।
আমেনা বেগম। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে চাকরি করেন। তিনি ঢাকার একটি ওয়ার্ডের শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক। থাকেন রাজধানীর আদাবরে। তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে এসেছেন এভারকেয়ার হাসপাতালে। হাতে লাঠি ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আমেনা বলছিলেন, আমি একটু নেত্রী খালেদা জিয়াকে দেখব।
এভারকেয়ারকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য ও খালেদা জিয়ার পরিবারের বাইরে কাউকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। সেজন্য, আমেনা বেগমকে বলা হয়, আপনি ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
তখন আমেনা বলেন, “আমি না দেখে যাব না। এক নজর দেখব। আজ সারা রাত অপেক্ষা করতে হলেও আমি করব। তবুও আমি না দেখে যাব না। আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে এসেছি।”
কাঁদতে কাঁদতে আমেনা বেগম বলছিলেন, খালেদা জিয়া স্বামী হারা, সন্তান হারা। তিনি বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছেন তার আদর্শ দিয়ে। আমরা তার আদর্শ শিখেছি। জিয়াউর রহমানের আদর্শ শিখছি। তার মতো নেত্রী আর এই বাংলাদেশে হবে না। যিনি দেশের জন্য জীবনটাই দিয়ে দিলেন কিন্তু কখনো দেশ ছেড়ে যেতে চাননি।
ফাতেমা কিংবা কেবল আমেনা নয়, এমন শত শত মানুষ এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করছে। তাদের অধিকাংশই শোকে বিহ্বল। সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকের সঙ্গে কথা বলেন এ প্রতিবেদক।
শরিফুল ইসলাম নামের এক বিএনপির সমর্থক বলছিলেন, ম্যাডাম মারা গেছেন, এটা ভাবতে এখনো কষ্ট হচ্ছে। বিশ্বাস হচ্ছে না। জীবনটাই তার নামে স্লোগান দিতে দিতে কাটিয়ে দিলাম। আর যখন আমাদের সুসময় আসার সুযোগ হলো, তখনই তিনি চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। উনাকে আল্লাহ ভালো রাখুক। জান্নান দান করুক।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান এভারকেয়ারে গেছেন বিকেল ৫টার দিকে। তিনি বলছিলেন, ম্যাডামের জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে। তাই চলে এলাম এখানে। আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসিব করুক।
ওমর ফারুক নামের এক রিকশাচালক বলছিলেন, দুপুর থেকে এখন পর্যন্ত এখানেই আছি। যেতে ইচ্ছে করছে না। ম্যাডামকে যদি একবার দেখতে পেতাম! গণতন্ত্রের জন্য যিনি জীবনই দিয়ে দিলেন, সেই মানুষটা পরকালে ভালো থাকুক। দোয়া করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই।

মাসুদ রায়হান পলাশ