প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে বাস-লঞ্চ-ট্রেনে ঢাকায় লাখো জনতা
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রিয় জন্মভূমিতে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তার এই ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে রাজধানী ঢাকা এখন জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। প্রিয় নেতাকে দেখতে দেশের প্রতিটি জেলা থেকে বাস, বিশেষ ট্রেন, লঞ্চ ও ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে চেপে লাখো নেতাকর্মী ও সমর্থক ইতোমধ্যে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
আরও পড়ুন : দেশের পথে তারেক রহমান, স্বাগত জানাতে প্রস্তুত নেতাকর্মীরা
রাজধানীর পূর্বাচল সংলগ্ন ‘৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফুট সড়ক) এলাকায় তারেক রহমানের জন্য বিশাল গণসংবর্ধনার আয়োজন করেছে বিএনপি। আজ দুপুর ১২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার অবতরণ করার কথা রয়েছে। সেখান থেকে সরাসরি তিনি গণসংবর্ধনাস্থলে যাবেন এবং দেশবাসীর উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, তীব্র শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোরের আলো ফোটার আগেই ৩০০ ফিট এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেছে। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক নেতাকর্মী গত রাত থেকেই খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছেন। কুড়িল মোড় থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত পুরো এলাকা ব্যানার, ফেস্টুন আর তোরণে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসছে ফিরে বাংলাদেশে’—এমন স্লোগানে মুখরিত পুরো রাজপথ।
আরও পড়ুন : বিমানবন্দর এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ঢল, স্লোগানে মুখর রাজপথ
নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর কড়া টহল লক্ষ্য করা গেছে। সমাবেশস্থলে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বিএনপির নিজস্ব সিকিউরিটি ফোর্স ও হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। জনদুর্ভোগ এড়াতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে নেতার ফেরার দিন হিসেবে বেছে নিয়েছে দলটি।
এদিকে ৩০০ ফিট সড়কের দুই পাশে মাইলের পর মাইল জুড়ে অবস্থান নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা। হাতে দলীয় ও জাতীয় পতাকা, ব্যানার এবং ফেস্টুন নিয়ে তারা নেতার আগমনের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন। ‘তারেক রহমান আসছে, বাংলাদেশ হাসছে’—এমন নানা স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে চারপাশ। নেতাকর্মীদের এই বিশাল জমায়েত সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
৩০০ ফিট এলাকায় আগত নেতাকর্মীরা জানান, তারা কোনো বাধা ছাড়াই সুশৃঙ্খলভাবে তাদের নেতাকে স্বাগত জানাতে চান। সাধারণ মানুষের মাঝেও এই আগমনকে ঘিরে ব্যাপক কৌতুহল ও উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ সময় বুধবার দিনগত রাত ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে ঢাকার উদ্দেশে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে রওনা দিয়েছেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমান। দেশে ফিরে ব্যস্ত সময় পার করবেন তারেক রহমান। প্রথম তিন দিন তিনি যেসব কর্মসূচিতে অংশ নেবেন, সে তথ্য জানিয়েছে বিএনপি। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টা ১৫ মিনিটে বিএনপির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে দেশে ফেরার পর তারেক রহমানের প্রথম তিন দিনের কর্মসূচি সম্পর্কে জানানো হয়।
আরও পড়ুন : জামালপুর স্পেশাল ট্রেনে ঢাকায় হাজারো নেতাকর্মী
বিএনপি ওই ফেসবুক পোস্টে জানায়, তারেক রহমানকে বহনকারী ফ্লাইট অবতরণ করবে ২৫ ডিসেম্বর বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে। এদিন ৩০০ ফিটে সংবর্ধনা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন তিনি। এরপর মা-কে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তিনি। এভারকেয়ার থেকে তিনি যাবেন গুলশানের বাসায়। পরদিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) বাদ জুমা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধি জিয়ারত করবেন তারেক রহমান। এদিন সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তিনি। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শহীদ শরিফ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করবেন তারেক রহমান। এদিন ভোটার আবেদন করতে নির্বাচন কমিশনে যাবেন তিনি। এ ছাড়া তিনি এদিন জুলাইয়ের আহতদের খোঁজ নিতে পঙ্গু হাসপাতালে যাবেন। ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করেন ৬০ বছর বয়সী তারেক রহমান। ২০০৯ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ২০১৮ সালে তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। তখন থেকেই তিনি বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করছেন, ভার্চুয়ালি সভা ও সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। লন্ডন থেকে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি গণমানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় তারেক রহমানকে। ১৮ মাস কারাগারে থাকার সময় অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান তারেক রহমান। এক সপ্তাহ পরে, ১১ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে পরিবারের সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে ঢাকা ছেড়েছিলেন তিনি। প্রবাসে থাকা অবস্থাতেই ২০১৫ সালে ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারিয়েছেন। তার জানাজায়ও শরিক হওয়ার সুযোগ পাননি। মায়ের সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন দীর্ঘদিন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তারেক রহমানের দেশে ফেরা দেশের এবং দলের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিএনপির নেতাদের মতে, তারেক রহমানের দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক বার্তা তাকে সাধারণ মানুষের কাছে আলাদা করে তুলেছে। তার আগমন ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।

এনটিভি অনলাইন ডেস্ক