বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ আলোচনা সম্পন্ন
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিতসু মোতেগির সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান ইকনোমিকস পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্টের (বিজেইপিএ) নেগোসিয়েশন সম্পন্নকরণের যৌথ ঘোষণা প্রদান করেন।
আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার সময় প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ-জাপান এপিএর চিফ নেগোসিয়েটর আয়েশা আক্তার, ডেপুটি চিফ নেগোসিয়েটর মো. ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ ও ফোকাল পয়েন্ট মাহবুবা খাতুন মিনু উপস্থিত ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, আলোচনার প্রাথমিক ধাপগুলো—
ক. বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ নেগোসিয়েশনের প্রাথমিক ধাপহিসেবে গঠিত যৌথ গবেষণা দল তাদের প্রতিবেদন ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে উভয় দেশ একযোগে প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে ১৭ টি সেক্টর অন্তর্ভুক্ত করে একটি সমন্বিত পদ্ধতিতে নেগোসিয়েশন পরিচালনার সুপারিশকরা হয়।
খ. বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ নেগোসিয়েশন শুরুর লক্ষ্যে উভয় দেশ একযোগে ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা প্রদান করে। সম্মত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯-২৩ মে ২০২৪ তারিখে ঢাকায় প্রথম রাউন্ডের নেগোসিয়েশন অনুষ্ঠিত হয়। তবে কিছু অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের কারণে নেগোসিয়েশন সাময়িকভাবে স্থগিত হয়।
গ. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য এই চুক্তির গুরুত্ব বিবেচনায় অন্তর্বর্তী সরকার নভেম্বর ২০২৪ থেকে পুনরায় অগ্রাধিকারভিত্তিতে কার্যক্রম শুরু করে এবং এক বছরের মধ্যে চুক্তিটি সম্পন্ন করার একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর ফলে অবশিষ্ট নেগোসিয়েশনগুলো নিম্নরূপভাবে অনুষ্ঠিত হয়—
দ্বিতীয় রাউন্ড (ঢাকা) : ১০-১৪ নভেম্বর ২০২৪, যার মাধ্যমে আলোচনা পুনরায় শুরু হয়।
তৃতীয় রাউন্ড (টোকিও) : ১৯-২০ ডিসেম্বর ২০২৪, যেখানে উভয় পক্ষ আলোচনা আরও জোরদার করে।
চতুর্থ রাউন্ড (ঢাকা) : ২-৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, আলোচনা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পঞ্চম রাউন্ড (টোকিও) : ২০-২৬ এপ্রিল ২০২৫, যখন উভয়পক্ষ জরুরি ভিত্তিতে অগ্রগতি সাধনে উদ্যোগী হয়।
ষষ্ঠ রাউন্ড (ঢাকা) : ২১-২৬ জুন ২০২৫, যেখানে চুক্তিরবিস্তারিত বিষয়গুলো স্পষ্ট রূপ নিতে শুরু করে।
সপ্তম ও চূড়ান্ত রাউন্ড (টোকিও) : ৩-১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, যার মাধ্যমে আলোচনা সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
সম্মত কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী সাত রাউন্ড নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে উভয় দেশ ইপিএ টেক্সট চূড়ান্ত করে।
ঘ. বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবংমাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আর্ন্তজাতিক বিষয়ক বিশেষ দূতজনাব লুৎফে সিদ্দিকীর সরাসরি সম্পৃক্ততা বাংলাদেশ-জাপান ইপিএ নেগোসিয়েশনের দ্রুত অগ্রগতির পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাদের সক্রিয় উদ্যোগেরঅংশ হিসেবে তারা একাধিক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং জাপান সফরের মাধ্যমে উচ্চপর্যায়ে কয়েক দফা আলোচনা অন্তর্ভুক্ত ছিল, যেখানে তারা নিজ নিজ মন্ত্রী পর্যায়ের সমমর্যাদার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময় করেন। এসব সফর এবং উদ্যোগগুলো নেগোসিয়েশন চূড়ান্তকরণে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকারকে জোরালোভাবে তুলে ধরেন, যাতে ইপিএর কৌশলগত গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়।
ঙ. বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সম্পাদিত হলে বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রথম দিন থেকেই সাত হাজার ৩৭৯টি পণ্যে জাপানের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে। পক্ষান্তরে, জাপান এক হাজার ৩৯টি পণ্যে বাংলাদেশের বাজারে তাৎক্ষণিক শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। বাংলাদেশ-জাপান ইপিএর মূল বৈশিষ্ট্য হলো বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকসহ (আরএমজি) অন্যান্য পণ্য চুক্তি স্বাক্ষরের দিন থেকেই জাপানের বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাবে। এ ছাড়া তৈরি পোশাক খাতে সিঙ্গেল স্টেজ ট্রান্সফরমেশন সুবিধাও পাবে।
চ. সেবা বাণিজ্য খাতেও উভয় দেশ উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকার করেছে। বাংলাদেশ জাপানের জন্য ৯৭টি উপখাত উন্মুক্তকরতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে জাপান বাংলাদেশের জন্য ১২০টি উপখাতে চারটি মোডে সার্ভিস উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ফলে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তি স্থানান্তর আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ছ. স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) হিসেবে বাংলাদেশ এই প্রথম বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানের সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সুফল বয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।
জ. এটি নেগোসিয়েটর পর্যায়ে আলোচনার চূড়ান্ত সমাপ্তি। উভয় দেশের উপদেষ্টা পরিষদ/ক্যাবিনেটের অনুমোদন ও পরবর্তী আইনগত ধাপগুলো সম্পন্নের পর এটি কার্যকর হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক