ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক আজ
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে বাংলাদেশ।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ১১টার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন।
রাষ্ট্রীয় শোক উপলক্ষ্যে আজ দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
ওসমান হাদির অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা। গতকাল পৃথক পৃথক শোকবার্তায় তাঁরা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাঁর শোকবার্তায় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, অন্যায়, অবিচার ও দমনপীড়নের বিরুদ্ধে হাদির আপসহীন অবস্থান গণতন্ত্রকামী মানুষের প্রেরণার উৎস ছিল।
শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওসমান বিন হাদির মৃত্যু হয়, যা সারাদেশে শোকের ছায়া ফেলেছে। শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৫টা ৫০ মিনিটে লাল-সবুজের কফিনে মোড়ানো হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।
রাজধানীর পুরানা পল্টন এলাকায় গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে দুর্বৃত্তরা রিকশায় থাকা ওসমান হাদিকে গুলি করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ওই রাতেই সেখান থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
শরিফ ওসমান হাদি ১৯৯৩ সালে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন মাদ্রাসা শিক্ষক, যার আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষা হাদির জীবন গঠনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠতম।
ওসমান হাদির শিক্ষা জীবনের ভিত্তি গড়ে ওঠে ঝালকাঠির বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসায়। সেখান থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে সম্পন্ন করে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান ঢাকায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনার্স মাস্টাস করেন।
ছাত্রজীবন শেষ করার পর হাদি জ্ঞান বিতরণের মহান পেশা শিক্ষকতাকে বেছে নেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি একটি স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন, যেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এরপর তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
শরিফ ওসমান হাদি এক সন্তানের জনক। পরিবার, শিক্ষকতা ও জ্ঞানচর্চাকে ঘিরেই তার প্রাত্যহিক জীবন আবর্তিত হতো।

নিজস্ব প্রতিবেদক