ওয়াজ মাহফিলে নির্বাচনি প্রচার নিষিদ্ধ
ধর্মীয় প্রচার তথা ওয়াজ মাহফিলের অনুষ্ঠানে নির্বাচনি প্রচার চালাতে পারবেন না কেউ। অর্থাৎ ওয়াজ মাহফিলে কোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষে কেউ নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা করতে পারবেন না।
শুধু তাই নয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগে ওয়াজ মাহফিলের অয়োজন করতে হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অনুমতি নিতে হবে। মানে, অনুমতি ছাড়া ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ।
ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নির্বাচনি প্রচার বন্ধে সোমবার স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে ইসির পক্ষ থেকে।
অন্যদিকে সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ও বেসরকারি টেলিভিশনে সাধারণ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে নির্বাচনি প্রচারের ক্ষেত্রে সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিবকে সোমবার পৃথক আরেকটি চিঠি দিয়েছে ইসি। ইসি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওয়াজ মাহফিলের ব্যাপারে ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা চিঠি দিয়েছি। ওয়াজ মাহফিলে যেন কেউ নির্বাচনি প্রচার চালাতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় প্রচার করা যাবে। কিন্তু, ধর্মীয় প্রচারের নামে নির্বাচনি প্রচার করা যাবে না। এ ছাড়া ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করতে হলে রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হবে।
ইসির দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, গত রোববার নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও এ সংক্রান্তে চিঠি দেওয়া হয়। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওয়াজ মাহফিলের ওপরে এই নিয়ন্ত্রণ বলবৎ থাকবে। রিটার্নিং অফিসারের (আরও) সম্মতি নিয়ে এ ধরনের ধর্মীয় প্রচার আয়োজনে অসুবিধা নেই।
আখতার আহমেদ বলেন, ভোটকে ঘিরে যাতে কোন পক্ষ রাজনৈতিক সুবিধা নিতে না পারে। কোনো ব্যক্তি ধর্মীয় প্রচারের মঞ্চে সংসদ নির্বাচনে উপলক্ষে ভোট চাইতে পারবেন না। মোট কথা হচ্ছে, কোনো ধরনের নির্বাচনি প্রচারণা চালানো যাবে না।
ওয়াজ মাহফিলের ব্যাপারে চিঠিতে বলা হয়েছে- আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ওই সময় পর্যন্ত ওয়াজ মাহফিল বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অনুমতি না দেওয়ার জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। ইতোমধ্যে যেসব ধর্মীয় সভা বা ওয়াজ তারিখ নির্ধারিত হয়েছে অথবা বিশেষ কারণে আয়োজনের একান্তই প্রয়োজন হলে রিটার্নিং কর্মকর্তার লিখিত অনুমতি নিয়ে আয়োজন করতে হবে। এসব অনুষ্ঠানে কোনো প্রার্থী, রাজনৈতিক দলের সদস্য বা অন্য কেউ নির্বাচনি প্রচার বা কারও পক্ষে বক্তব্য রাখতে পারবে না।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা ওয়াজ মাহফিলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োজিত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করতে হবে।
সাধারণত শীতের সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ম সংক্রান্ত আলোচনার অনুষ্ঠান ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে, প্রচারণা সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলসমূহ তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে দিয়ে নির্বাচনি পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে। আসন্ন সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সাক্ষাৎকার, টকশো বা নির্বাচনি সংলাপ পরিবেশনের সময় রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর প্রতি সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০২৫ এর বিধি ২৫ অনুযায়ী, গণমাধ্যমে নির্বাচনি সংলাপ, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী বা দলের প্রতিনিধি টিভি কর্তৃপক্ষের আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বক্তব্য দিতে পারবেন না। এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়ে নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

মাসুদ রায়হান পলাশ