মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ করার ঘোষণা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৫ উদযাপন ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানে নারীশিক্ষা, নারী অধিকার, মানবাধিকার এবং নারী জাগরণে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চারজন বিশিষ্ট নারীকে রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়। এ বছর নারীশিক্ষায় (গবেষণা) রুভানা রাকিব, নারী অধিকারে (শ্রম অধিকার) কল্পনা আক্তার, নারী জাগরণে (ক্রীড়া) ঋতুপর্ণা চাকমা ও মানবাধিকার ক্যাটাগরিতে নাবিলা ইদ্রিস বেগম রোকেয়া পদক পেয়েছেন।
নারীদের সামনে রেখেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক— এমন প্রত্যাশা করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যে আদর্শে বেগম রোকেয়া আমাদের নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন, অতি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছিলেন তার বক্তব্যে, তার লেখায়, আজকে যে চারজন পুরষ্কার পেলেন তারা রোকেয়ার সেই পথে আমাদের জাতিকে এগিয়ে দিলেন। এটি আরও একটি পুরস্কার না, এটা যুগান্তকারী পুরস্কার। তারা আমাদেরকে দুনিয়ার সামনে অন্য স্তরে নিয়ে গেছে। তারা শুধু বাংলাদেশের না, তারা সারা পৃথিবীর নেতৃত্ব দেওয়ার মেয়ে।
আজকের আয়োজনে শুধু বেগম রোকেয়াকে স্মরণ নয়, বরং ব্যর্থতা খুঁজে বের করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা ১০০ বছর পার হলেও আরেকজন রোকেয়া সৃষ্টি করতে পারিনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি যেসব দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, যেসব স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, এ স্বপ্নকে আমরা আমলে আনতে পারিনি। কথা বলেছি কিন্তু অগ্রসর হতে পারি নাই। কেন পারলাম না এটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, মেয়েরা জানে না তাদের নাম কী। সবাই চিনে— অমুকের মা, অমুকের স্ত্রী, অমুকের মেয়ে, নাতি-নাতনি হিসেবে। নাম জানে না। সমাজের একটা অংশ কীভাবে সমাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে— এটা তার নমুনা। আমরা নাম ঠিক করে দিলাম। নাম লিখতে শেখানোর জন্য হাতে কাঠি ধরিয়ে দিলাম। দিনরাত পরিশ্রম করে, চোখের পানি ফেলে তারা নাম লেখা শিখল— এটা ১০০ বছর পরের অবস্থা। ১০০ বছর আগে রোকেয়া সেই আমলে যে স্বপ্ন দেখেছে, সেটা বিশ্বাস করা যায় না। আজকে অনেকে বলে, ‘হ্যাঁ, সুন্দর কথা বলেছে।’ সুন্দর কথা না, রোকেয়া বিপ্লবী কথা বলেছে। সমাজকে ঝাঁকুনি দিয়ে কথা বলেছে। কিন্তু সেই ঝাঁকুনি বহন করে নিয়ে যাওয়ার মতো ব্যক্তি আর এলো না। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য।
বেগম রোকেয়া কোনো কাজ সমাজকে বাদ দিয়ে করেননি, সবসময় সমাজকে নিয়েই করেছেন— এমন মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১০০ বছর আগে রোকেয়া লিখেছে, নারী-কন্যাদের লেখাপড়া শেখাও যাতে সে অন্ন উপার্জন করতে পারে। সেখান থেকে আমরা শিখতে পারছি না কেন? আয়োজন করছি কিন্তু শিখতে পারছি না। আমাদের দৈনন্দিন পথে রোকেয়া সাথে থাকুক, তাহলেই অগ্রসর হতে পারব।
বিশ্বদ্যিালয় জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ি, ইকনোমিক্স অনার্সে, অনেক ছেলে ছিল, মেয়ে ছিল মাত্র চারজন। কোনো কোনো বিভাগে কোনো মেয়েই ছিল না। এখন যেকোনো শিক্ষায়তনে যাও, মেয়ে শিক্ষার্থীরা উপচে পড়ছে। আমি খোঁজ নিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন অর্ধেক-অর্ধেক। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মেয়েদের হল কয়টা? আমাকে বলল পাঁচটা। আর ছেলেদের হল ১৩টা। এটা কেমন বিচার হলো? মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা তো আগে করতে হবে।
নারীদের সামনে রেখেই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, মেয়েরা গণঅভ্যুত্থানে তাদের নেতৃত্ব দেখিয়েছে। আজকের নারী সমাজ গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নারী সমাজ। এটা ভিন্ন নারী সমাজ। তাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই নারী সমাজ শুধু নারীদের নয়, সবাইকে উজ্জীবিত করবে। সে জন্যই নারীদের উঁচু স্তরে ধরে রাখা আমাদের জন্য দরকার। নারীদের সামনে রেখেই আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।
নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।

নিজস্ব প্রতিবেদক