অসময়ের বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতির শঙ্কা
গত বছর আলু চাষে লোকসানে পড়েছিলেন নওগাঁর কৃষকরা। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার আগাম আলু চাষ শুরু করেন তারা। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ফসলি জমিতে পানি জমে গেছে। যেসব জমিতে আগাম আলু বপন করা হয়েছে, সেসব জমিতে পানি জমে থাকায় বীজ পচে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে আলুচাষিদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে। একই সঙ্গে রোপা আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাকসবজিরও ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় আমন ধান চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ১ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে। আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোথাও আলু চাষের প্রস্তুতি চলছে, আবার কোথাও সদ্য বপন করা হয়েছে আলুর বীজ। এসব জমিতে বৃষ্টির পানি জমে গেছে। ফসল বাঁচাতে পানি সরানোর চেষ্টা করছেন কৃষকেরা। শুধু আলু নয়, আগাম শীতকালীন ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মরিচ, বেগুন, মুলা- এইসব সবজির গাছও লুটিয়ে পড়েছে। যে জমিতে সবজি এখনও সুস্থ আছে, সেগুলো রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করছেন কৃষকেরা। পাশাপাশি মাঠের আধাপাকা ধানও হেলে পড়েছে, পানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আলুর ভালো দাম না পাওয়ায় এবছর আগাম আলু চাষের সিদ্ধান্ত নেন তারা। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আলুর জমিতে পানি জমে রোপণ করা বীজ নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, অনাবাদী জমিতে পানি সরানোর পর বীজ রোপণ করতে আরও দেরি হতে পারে। এতে খরচ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শীতকালীন শাকসবজির জমিতেও শিকড় পচে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।
আত্রাই উপজেলার কালিকাপুর ডাঙ্গাপাড়া এলাকার কৃষক জয়নাল বলেন, গত বছর আলু চাষ করে অনেক লোকসান হয়েছে। ভাবলাম আগাম আলু লাগালে ভালো দাম পাবো। সেই আশায় দেড় বিঘা জমিতে আলু বীজ রোপণ করেছি। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলো। এখন পানি জমে থাকায় গাছ ঠিকমতো উঠতে পারবে কিনা জানি না।
মান্দা উপজেলার ভারশো এলাকার কৃষক আশরাফ হোসেন বলেন, আগাম আলু চাষে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। এলাকার কয়েকজনকে দেখে আমি এক বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমেছে। এতে রোপণের বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হোমায়রা মন্ডল বলেন, বৃষ্টি হলেও ভারী বর্ষণ হয়নি। সদ্য রোপণ করা আলুর ক্ষতি হওয়ার কথা না। যেসব জমিতে আলু লাগিয়ে ৮-১০ দিন হয়েছে, সেগুলোতে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। শীতকালীন সবজি ও ধানেরও বড় ক্ষতি হবে না। ক্ষেত থেকে পানি সরে গেলে সমস্যা হবে না।

আসাদুর রহমান জয়, নওগাঁ