শামীম আশরাফের জামিন করান জামায়াতের আইনজীবী, নতুন মামলায় গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহে বেহেশত নিয়ে কটূক্তি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দেওয়া বিতর্কিত শামীম আশরাফকে (৩৮) নয় দিনের মধ্যেই জামিন করান জামায়াতপন্থী এক আইনজীবী। এরপর পুলিশের নতুন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
শামীম আশরাফ জামিন পাওয়ার পর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ মেলায় আদালতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দুটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ।
শামীম আশরাফের পক্ষের আইনজীবী দেবব্রত নাথ ভুলু জামায়াততপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ লইয়ার্স কাউন্সিল’ ময়মনসিংহের সদস্য। তিনি জেলা জামায়াতের সনাতনী ইউনিটেরও সভাপতি।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টায় শামীম আশরাফের পক্ষে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরিফুল হকের আদালতে জামিন শুনানি করেন দেবব্রত নাথ ভুলু। এরপর আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। তবে জামিন আদেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের সঙ্গে শামীম আশরাফের গোপন ষড়যন্ত্রের তথ্য আদালতে উপস্থাপন করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দুটি পুরোনো মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে। এতে শামীম আশরাফের মুক্তি আটকে যায়।
আদালতের পরিদর্শক পি এস এম মোস্তাছিনুর রহমান জানান, আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর শামীম আশরাফকে আরও দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর নথি কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহে জামায়াতের লইয়ার্স কাউন্সিলের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আমান উল্লাহ বাদল বলেন, দেবব্রত নাথ ভুলু এই সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য তবে শামীম আশরাফের জামিন দেবব্রত নাথ ভুলু করেছেন কি না সেটা আমার জানা নেই।
জামিনের পর শামীম আশরাফের দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ জানিয়েছে, নগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আমিনুল হক শামীম পরিচালিত ‘শামীম এন্টারপ্রাইজ’ কার্যালয়ের ভেতরে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রমূলক বৈঠক ও গোপন পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছিলেন শামীম আশরাফ। এ ছাড়া নগরীর ক্যাপিটাল কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন খান আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করে গেরিলা হামলার যে ষড়যন্ত্র করছিলেন তার সঙ্গেও শামীম আশরাফ জড়িত।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম জানান, আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার মতো কাজে শামীম আশরাফ জড়িত। যে কারণে পুলিশ তাকে আদালতে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে।
এর আগে শামীম আশরাফ তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি পোস্টের কমেন্টের জবাবে বেহেশতের সর্বোচ্চ মাকামকে একজন পর্নো তারকার সঙ্গে তুলনা করেন। ইসলাম ধর্ম ও মুসলমানদের পবিত্র বিশ্বাস নিয়ে এমন রিকমেন্টর পর শহরজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ধর্মপ্রাণ মানুষ ও ইসলামী সংগঠনগুলো তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। পরে ৬ অক্টোবর রাতে পুলিশ তাকে আটক করলে ধর্ম অবমাননা ও সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা হয়। আদালত তাকে এক দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ড চলাকালীন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার জব্দ করে ডিবি পুলিশ।
জামিনের পর শামীম আশরাফের দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তারের বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকদের বলেন, বিগত সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার স্পর্শকাতর কিছু ছবি তার ডিভাইসে পাওয়া গেছে। তদন্তের স্বার্থে এসব বিষয় এখনি প্রকাশ করা যাচ্ছে না।