কোটালীপাড়ায় বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকাবাইচ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় আনন্দমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার কালিগঞ্জ নদীতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী নান্দনিক এ নৌকাবাইচ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যে লালিত আকর্ষণীয় এ নৌকাবাইচে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, নড়াইল, বরিশাল জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের ২০টি সরেঙ্গা, ছিপ, কোষা ও বাচারি নৌকা অংশ নেয়। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর নৌকা ও লোকসমাগম কম হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
আবহমান গ্রাম বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও নিজস্বতা ধরে রাখতে হাজার প্রাণের আনন্দ উচ্চ্ছ্বলতায় কোটালীপাড়ার কালিগঞ্জের বাবুর খালে কালিগঞ্জ বাজার থেকে খেজুরবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নৌকাবাইচ হয়। বাড়তি আকর্ষণ ছিল নৌকায় নৌকায় মেলা। নৌকায় ও ট্রলারে করে নৌকাবাইচ দেখতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে সন্ধ্যায় এ নৌকাবাইচ শেষ হয়। বিভিন্ন বয়সের মানুষ খালের দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে নৌকাবাইচ প্রত্যক্ষ করেন।
এ দিন দুপুর থেকে নানা বর্ণে ও বিচিত্র সাজে সজ্জিত দৃষ্টিনন্দন এসব নৌকা কাঁসর (কাঁসি) ও নাকাড়ার (ঠিকারি) তালে তালে বাইচ শুরু করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে একের পর এক কুচ বা ছোপ। বাদ্যের তালে জারি সারি গান গেয়ে এবং নেচে হেইও হেইও রবে বৈঠার ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে এক অনবদ্য আবহ সৃষ্টি হয়। দুকূলে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার মানুষের হৃদয়ে জাগে দোলা। মাল্লাদের সাথে সমবেত হন অগণিত সমর্থক ও দর্শক। তারা উৎসাহ দেন বাইচে। খালের দুই পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের করতালি ও হর্ষধ্বনিতে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
স্থানীয় কলাবাড়ি গ্রামের সুভাষ বাড়ৈ বলেন, আমাদের এলাকার নৌকাবাইচ কেউ প্রচলন করেননি। প্রায় ২০০ বছর আগে বিল এলাকার মানুষ চিত্ত বিনোদনের জন্য নৌকা দিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করতো, এ থেকে এটি প্রচলিত হয়। সে ঐতিহ্য এখনো চলছে। নৌকাবাইচ থেকে এলাকার মানুষ নির্মল আনন্দ উপভোগ করে।
নৌকাবাইচ দেখতে আসা বুরুয়া গ্রামের গৃহবধূ অর্পিতা হালদার বলেন, নৌকাবাইচ থেকে শুধু আনন্দ পেতেই নৌকার মালিকরা নৌকা নিয়ে এখানে আসেন। বাইচ উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসে। ভাল খাবারের আয়োজন করা হয়। মিলে মিশে সবাই আনন্দ উপভোগ করি। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর বাচারি নৌকা অনেক কম এসেছে। বিগত বছরগুলোতে প্রায় শতাধিক নৌকা এখানে বাইচ দিতে আসে। সেখানে এবছর ছোট বড় মিলিয়ে ২০টি নৌকা এসেছে। দর্শক সমাগমও ছিল খুব কম।
কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট বিজন বিশ্বাস বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জের নৌকাবাইচ এখনো বর্ণিল। এ অঞ্চলে বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে নৌকাবাইচের মধ্যে দিয়ে মৌসুমে বাইচের সূচনা হয়। এ নৌকাবাইচের কেউ আয়োজন করেন না। মনের খোরাক মেটাতে স্থানীয়রা নৌকাবাইচ দিয়ে থাকেন। এ কারণে এখনো কোটালীপাড়ায় নৌকাবাইচ সগৌরবে টিকে আছে। প্রতিবছর দুর্গা ও লক্ষ্মীপূজায় কালীগঞ্জসহ কোটালীপাড়ার বিভিন্ন স্থানে নৌকাবাইচ হয়।

মিজানুর রহমান, গোপালগঞ্জ (সদর-কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া)