ফাঁকা ঢাকায় আজ ‘যা মন চায় ভাড়া দিয়েন’
কাল পবিত্র ঈদুল আজহা। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপণে অধিকাংশ ঢাকাবাসী শহর ছেড়েছে ইতিমধ্যে। এখনও যারা ছাড়তে পারেনি, তারা শেষ দিনে ঢাকা ছাড়ছে। এতে ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা। ফলে গ্রামমুখী মানুষের ঢল নেমেছে ঢাকা থেকে বাইর হওয়া পথগুলোতে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়ক প্রায় ফাঁকা। সিগন্যালেও জানযট নেই। মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছে আরাম-আয়েশে।
রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সড়কে মানুষ কম। তবে, সিএনজি বা রিকশার আধিক্য দেখা গেছে। বাস তুলনামূলক কমই। অন্যান্য দিনের মতো আজ আর চিরচেনা ঢাকার অবস্থা নেই। গতকালও ভাড়া নিয়ে রিকশা ও সিএনজি চালকেরা দর কষাকষির সুযোগ বেশি থাকলেও আজ তা নেই বললেই চলে। বরং, যাত্রীর অভাবে সিএনজি বা রিকশাচালকদের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারার মোড়ে কয়েকজন রিকশাচালক দাঁড়িয়ে ছিলেন। সে সময় নজরুল ইসলাম নামের এক যাত্রী পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। একই সঙ্গে কয়েকজন রিকশাচালক নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলেন, ‘কোথায় যাবেন মামা?’ কার ডাকে সাড়া দেবে ভাবতে ভাবতে একজন রিকশাচালককে বললেন, ‘আমি ঢাকা মেডিকেল যাব। কত নিবেন?’
জবাবে এক রিকশাচালক বললেন, ‘আজ আর কিছু বলব না। আপনার ইচ্ছে, যা মন চায় ভাড়া দিয়েন।’ এ পথের ভাড়া সাধারণত ৬০-৮০ টাকায় যাতায়াত করা যায়। নজরুল ইসলাম বললেন, ‘৬০ টাকা দিব, যাবেন?’ জবাবে আবারও রিকশাচালক বললেন, ‘যা মন চায় দিয়েন।’
পরে সেখানে থাকা জাফর নামের এক রিকশাচালক বললেন, ‘আজ যাত্রী কম। ভাড়াও বেশি না। মূল ভাড়ার চেয়ে কমেই যাচ্ছে চালকরা। কাল ঈদ। কেউ বসে থাকতে চাচ্ছে না। যদি দুটো টাকা বেশি পাওয়া যায়। আর যাত্রীও ভালো। একজনের সঙ্গে ৫০ টাকা ভাড়া চুকিয়ে গেছি। অরজিনাল ভাড়া ৬০ টাকা। তবে যাত্রী আমাকে ৭০ টাকা দিয়েছে। ২০ টাকা ঈদ বোনাস।’
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আজমুল ইসলাম নামের এক যাত্রী সিএনজিতে করে কারওয়ান বাজার এসে নেমেছেন কেবল। তার কাছে জানত চাওয়া হয় ভাড়া কত নিল? জাবাবে তিনি বলেন, ‘ভাড়া দিয়েছি ২৫০ টাকা। তবে, অন্যান্য সময় এ পথে আগে কখনো ২৫০ টাকা ভাড়ায় আসতে পারেনি। যদিও আমি ২৭০ টাকা দিয়েছি। ২০ টাকা বেশি দিয়েছি। আবার রাস্তা একেবারেই ফাঁকা। যে যে পথ দিয়ে এসেছি, সব ফাঁকা। কোনো যানজট নেই। আসতেও বেশি সময় লাগেনি।’
শিকড় পরিবহণ থেকে রাজধানীর শাহবাগে নামেন মারুফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘মিরপুর ১০ থেকে এ পর্যন্ত এলাম। কিন্তু কোথাও যানজট নেই।’
মতিঝিলের বাস কাউন্টারে যাচ্ছিলেন সজীব হোসেন। তিনি ঈদের ছুটিতে যশোর যাবেন। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার সময় তিনি ছুটি পেয়েছেন। বলছিলেন, ‘আমি একটি কোম্পানির সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কাজ করি। আজ ছুটি পেলাম। এখন যাব মতিঝিল বাস কাউন্টারে। টিকিট কাটা নেই। টিকিট না পেলে ড্রাইভারের পাশে বসে হলেও চলে যাব।’
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, শাহবাগ, বাংলামোটর, বিজয় সরণি, এই জায়গাগুলোতে সাধারণত যানজট প্রায় সময়ই লেগে থাকে। কিন্তু সেই চিরচেনা চিত্র আজ আর নেই। কোনো মোড়ে সিগন্যালে বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না পরিবহণগুলোকে। ফলে, রাজধানীর ভেতরে মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারছে।
এই পুরো পরিবেশ উপভোগ করছেন ঢাকাইয়া ছেলে শফিকুল ইসলাম। তিনি মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। শফিকুল বলছিলেন, ‘আমরা শহুরে মানুষ অপেক্ষায় থাকি কখন ঈদ আসবে। ঈদ এলেই গ্রামের মানুষ গ্রামে চলে যাবে, আর আমরা ফাঁকা ঢাকা দেখব। আমার ঢাকা দেখব। এই যে আজ মোটরসাইকেল নিয়ে সারা শহর ঘুরব। সন্ধ্যায়ও বন্ধুরা মিলে বের হব।’
বিমানবন্দরের দিক থেকে আসা বাসচালক ফজলুল করিম বলেন, আজ ঢাকা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। কোথাও বেশি সময় দাঁড়াতে হচ্ছে না। আরামে গাড়ি চালাচ্ছি। আজ বেশি ট্রিপ মারা যাবে। যাত্রীদেরও কষ্ট কম। ঈদর আগে-পরে এমন হয় সব সময়।
এদিকে সড়ক, রেল ও নৌপথে আজও ঢাকা ছাড়ছে মানুষ। আগেই অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। ঈদের আগে শেষবারের মতো মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ সারা দিনে কমলাপুর থেকে মোট ৫৪টি ট্রেন ছাড়বে। এর মধ্যে রয়েছে একটি বিশেষ ঈদ স্পেশাল ট্রেনও।
সকাল পৌনে পাঁচটায় দিনের প্রথম ট্রেন বলাকা এক্সপ্রেস ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। এরপর একে একে ছাড়ে অন্যান্য আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন। এবারের ঈদযাত্রায় বেশিরভাগ যাত্রী আগেভাগেই অনলাইনে টিকিট কেটে যাত্রা করছেন। ফলে প্ল্যাটফর্মে ভিড় থাকলেও টিকিট কাউন্টারে তুলনামূলক চাপ নেই। তবে, অনলাইনে টিকিট না পেয়ে স্ট্যান্ডিং টিকিট কেটে রওনা দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, স্ট্যান্ডিং টিকিট নেওয়ার পরও পর্যাপ্ত জায়গা বা দাঁড়ানোর সুযোগ না পাওয়ায় ছাদে উঠেছে অনেক যাত্রী। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেনের তেমন শিডিউল বিপর্যয়ের খবর পাওয়া যায়নি। সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকে। ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে স্টেশনজুড়ে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এছাড়া রাজধানীর গাবতলী, যাত্রাবাড়ী ও মহাখালীসহ নানা জাগয়ায় সকালে বাসে যাত্রীদের চাপ বেশি ছিল। তবে দুপুর হতে হতে চাপ কমতে থাকে। কয়েক জায়গায় গাড়ি ছাড়তে কিছুটা বিলম্বের খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে নগরবাসীর ঢাকা ছাড়াকে স্বস্তিদায়ক করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল বেড়েছে। চালু আছে জরুরি নম্বরে সেবা। জরুরি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক