ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদের ঠাঁই নেই
সন্ত্রাস ও জঙ্গি কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসানসহ বিভিন্ন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও মসজিদের ইমাম, পুরোহিত বৌদ্ধভিক্ষুসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
স্কুলশিক্ষকদের পক্ষে বক্তব্য দেন রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রণতোষ মল্লিক। তিনি বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদে কোনো স্থান নেই, তার প্রমাণ বিদায় হজের ভাষণ। এই ভাষণে মহানবী (সা.) বলে গেছেন আমরা কীভাবে চলব, প্রতিবেশীর সঙ্গে বা অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করব।’ শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের নির্দেশনা মেনে কাজ করে যাচ্ছি, শ্রেণিভিত্তিক শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়েছি। তাঁরা মনিটরিং করছেন।’
বনরূপা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবু সৈয়দ বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখলে কোনো দুষ্কৃতকারী তাদের ভুল পথে নিতে পারবে না। পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনগুলোর প্রতি যত্নবান হতে হবে, আমরা অতিমাত্রায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়াতে বিপথগামীরা আমাদের সন্তানদের ভুল পথে নিয়ে যেতে পারছে।’ শহরের সম্প্রীতি রক্ষার্থে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে কুচক্রীমহল এ ধরনের জঘন্য কাজ করছে। তারা চায় না, আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। দল-মত বিরোধ ভুলে আমাদের একসঙ্গে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করতে হবে। আমাদের দেশ সম্প্রীতির দেশ, এখানে জঙ্গিদের কোনো স্থান হবে না।’
রাঙামাটি জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিকালে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। দেশ না বাঁচলে আমরা রাজনীতি করব কোথায়, গণতন্ত্র রক্ষা ও জঙ্গিবাদ রুখতে আমাদের দল কাজ করে যাচ্ছে। রাঙামাটি জেলা বিএনপিও এর বাইরে নয়, এই জেলার সম্প্রীতি রক্ষার্থে আমরা কাজ করে যাব।’ তবে জেএমবির লোকজন এখানে এসে আত্মগোপন করতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রশাসনকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা বলেন, ‘কোনো ধর্মেই মানুষ হত্যা করার বিধান নেই। মানুষ হত্যা করে স্বর্গে যাওয়া যাবে, এটা আমি বিশ্বাস করি না। ধর্ম মানুষকে কল্যাণের পথে আনে, ধর্মে হানাহানির কোনো স্থান নেই। যারা এ কাজ করছে, তারা দেশ ও জাতির শত্রু।’
পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, ‘ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করা কোনো পুণ্যের কাজ নয়, এটা অপরাধ, এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। যেভাবে ধর্মীয় গুরুদের হত্যা করা হয়েছে, তাতে আমাদের সতর্ক হতে হবে, একা চলাফেরা না করে দু-তিনজন একসঙ্গে চলাচলের পরামর্শ দেন তিনি।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, ‘বাংলাদেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা চলছে, কুচক্রীমহল কখনই সফল হবে না, সরকার ও জনগণ সম্মিলিতভাবে তা প্রতিহত করবে। জঙ্গিবাদের ঠাঁই ইসলাম ধর্মে নেই, যারা মানুষ হত্যা করে, চাঁদাবাজি করে তারাই জঙ্গি এদের প্রতিহত করতে হবে।’
সাংসদ বলেন, ‘আমরা পাহাড়ে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান একসঙ্গে সহাবস্থান করছি। আমরা যত একসঙ্গে বসতে পারব, ততই আমাদের বন্ধন আরো মজবুত হবে।’

ফজলে এলাহী, রাঙামাটি