পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী
প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে তিনি দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ প্রকাশ করেছেন।
আজ শনিবারের জন্য দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের শক্তি হৃদয়ে ধারণ করে আজ আমরা নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। আমি দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ। বাঙালিরা দুর্নীতিমুক্ত বীর জাতি হিসেবে বিশ্বে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৫ জুন বাংলাদেশের জন্য একটি গৌরবময় ঐতিহাসিক দিন।’ তিনি বলেন, “প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত দেশের বৃহত্তম ‘পদ্মা সেতু’ শনিবার যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের এই শুভ উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’ তিনি বলেন, ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে দেশের সার্বিক উৎপাদন (জিডিপি) এক দশমিক ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে এবং বার্ষিক শূন্য দশমিক ৮৪ শতাংশ হারে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা ও রাজধানীর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘বিপুল সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলের বহুমুখী উন্নয়নের জন্য এ সেতুটির অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। এ অঞ্চলের উন্নয়নে, বিশেষ করে এখানকার শিল্পায়ন ও পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি, সুন্দরবন ও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতসহ এ অঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৈসর্গিক স্থান বিপুল সংখ্যক পর্যটককে আকৃষ্ট করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নদী বিধৌত উপকূলীয় এলাকার কৃষি ও মৎস্য সম্পদের আহরণ এবং সারা দেশে দ্রুত বাজারজাতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
পদ্মা সেতু মোংলা সমুদ্রবন্দর, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, বড় বড় নদীর ওপর অন্যান্য সেতুসহ বিভিন্ন প্রকল্পের পূর্ণ ক্ষমতা কাজে লাগাতে সাহায্য করবে; যা এই অঞ্চলে আওয়ামী লীগ সরকার বাস্তবায়ন করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ অঞ্চলে অবস্থিত বেনাপোল, ভোমরা ও দর্শনার মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। সেতুটি দুই প্রান্তের মধ্যে বিদ্যুৎ, গ্যাস, অপটিক্যাল ফাইবার ও অন্যান্য ইউটিলিটি পরিষেবার সংযোগ স্থাপন করবে।’ তিনি বলেন, ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে মামলা করলে আদালত সব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দেয়।’
এরপর সরকার বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রদানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেয়, তখন আমরা জনগণের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছি। দেশপ্রেমিক জনগণের আস্থা ও সমর্থনে আজ উন্নয়নের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। আগামী দিনেও জনগণের আশা, আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন পূরণে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব।’
শেখ হাসিনা চ্যালেঞ্জিং ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প’ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, পরামর্শক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সেনা সদস্য ও নির্মাণ শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাদের অবদান ও অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য শুভেচ্ছা জানান।
প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি ও বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য সেতুর দুই প্রান্তের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)